‘একটি রাষ্ট্র হিসাবে আমাদের অস্তিত্ব আজও যে নামের সঙ্গে জড়িত তার নাম হিন্দুরাষ্ট্র’। নিজের আত্মচরিত ‘আত্মপরিচয়’-এ এমনই নাকি লিখেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর! অন্তত আরএসএস-এর দাবি তাই। অবশ্য ‘আত্মপরিচয়’ গ্রন্থে এমন বক্তব্যের কোনও হদিশ মেলেনি। প্রশ্ন উঠেছে, সঙ্ঘের তাত্বিকেরা কোথা থেকে পেলেন রবিঠাকুরের এই উদ্ধৃতি?
দিল্লীর বিজ্ঞান ভবনে ‘ভবিষ্যতের ভারত’ শীর্ষক ৩ দিনের আলোচনাচক্রের আয়োজন করেছে আরএসএস। সেই উপলক্ষ্যে মনীষীদের ছবি ও বাণী দিয়ে সাজানো হয়েছে ভবন চত্বর।সেখানেই দীনদয়াল উপাধ্যায়ের সঙ্গে ঠাই পেয়েছে গান্ধীজি, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও। পরিবেশের ষষ্ঠীপুজো করে গাছের গায়েই পেরেক দিয়ে সাঁটানো হয়েছে তাঁদের বানী। কিন্তু সমস্যা হল, সেইসব উক্তি কবে, কোথায় তাঁরা করেছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। কারণ কোনওটাই সাধারণের পরিচিত নয়। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, রবীন্দ্রনাথকে নিজেদের খুশি মতো ব্যবহার করতে ব্যগ্র সঙ্ঘ।
এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোড়ন শুরু হয়েছে। কিন্তু সঙ্ঘ হঠাৎ হেগড়েকর, গোলভালকারদের ছেড়ে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে পড়ল কেন? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপি-র হাত ছেড়ে এককভাবে প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে আরএসএস। শিক্ষিত মানুষের মননে-হৃদয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্য আলাদা জায়গা আছে। সেটাকেই কাজে লাগাতে চাইছে আরএসএস।
ইদানীং আরএসএস-এর তাত্বিক নেতারা একটু অন্য সুরে গাইছেন। গত কালই মোহন ভাগবত কংগ্রেসের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে ওদের অবদান ভোলার নয়। এরপর আজ আবার রবীন্দ্রনাথের ভুল উদ্ধৃতি করে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর ব্যগ্রতা। সব মিলিয়ে শিব ঠাকুরের আপন দেশে আরএসএস-এর কাজ কর্ম সর্বনেশে – এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই।