বাংলায় এখন করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বাইরের কারোর সঙ্গে বর্তমানে দেখা করা সম্ভব নয়। এমনই অভিযোগ তুলে এবার রাজ্যের কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব নাকচ করে দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। প্রসঙ্গত, ভুট্টা চাষীদের ৩ সদস্যের ছোট প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করে কেন্দ্র সরকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া ফসলের দাম না পাওয়ার অভিযোগ ও অসুবিধার কথাই এই বৈঠকে রাজ্যপাল ধনকরকে জানানোর কথা ছিল।
২৫ জুন থেকে ১১ আগস্ট, এই ক’দিনে মোট ১৭টি চিঠি দেওয়ার পর রাজভবনের ডেপুটি সচিব স্বরাজ ইন্ডিয়া ও জয় কিষাণ আন্দোলনকে জানান যে করোনার জেরে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চাষীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে রাজ্যপালের সাক্ষাৎ সম্ভব নয় (রাজভবনের চিঠির প্রতিলিপি সংলগ্ন)। অথচ রাজভবনের ওয়েবসাইট ও সংবাদমাধ্যম সূত্র থেকেই স্পষ্ট যে, রাজ্যপাল এই দেশব্যাপী লকডাউন ঘোষণার পরও সেইসময় বহু বৈঠক ও জনকর্মসূচীতে যোগদান করেছেন।
যেমন, সর্বপ্রথম ১১ এপ্রিল দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধি দলের সাথে দেখা করে রাজ্যপাল বৈঠক করেন ও স্মারকলিপি গ্রহণ করেন। এরপর ১২ মে বিজেপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ফের রাজ্যপাল বৈঠক করেন। ৫ জুন খোদ রাজভবনের অন্দরেই তিনি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী পালন করেছেন। ১৩ জুলাই তৃতীয়বার দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে বিজেপি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর। এবং সর্বশেষ, গত ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন রাজভবনে চা-চক্র আয়োজন করেন তিনি।
এই তথ্যগুলো সামনে আসতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে নিয়মিত বিষোদগার করে খবরের শিরোনামে থাকা বাংলার রাজ্যপালের সক্রিয়তার তালিকায় কারা বেশি অগ্রাধিকার পাচ্ছে? রাজ্যের খেটেখাওয়া কৃষক, মজুর ও শ্রমিকরা নাকি কেবল বিজেপি নেতারা? কেন্দ্র সরকারের দোষে দুর্দশাগ্রস্থ চাষীদের কথা শোনার থেকেও কি এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা বেশি প্রাধান্য পায় ধনকরের কাছে? সেই প্রশ্নও উঠছে।
স্বরাজ ইন্ডিয়ার সর্বভারতীয় সভাপতি যোগেন্দ্র যাদব বলেন, “লকডাউন পরিস্থিতিতে রাজ্যপাল ধনকর একাধিকবার রাজনৈতিক বক্তব্য ব্যক্ত করার জন্য সাংবাদিকদের রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন। ৩ বার তিনি সময় দিয়ে বিজেপি দলের প্রতিনিধিদের সাথে রাজভবনে দেখা করে তাঁদের কথা শুনেছেন এবং আলোচনা করেছেন। অতিমারীতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিধি থাকা সত্ত্বেও তিনি দিল্লী গিয়ে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে রাজ্যের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নালিশ করে এসেছেন। গত স্বাধীনতা দিবসে রাজভবনে তার আয়োজিত সান্ধ্য চা-চক্রে একশোর বেশি অতিথিকে আপ্যায়ন করেছেন। তাহলে গরীব চাষীদের সমস্যার কথা শুনতে ওনার কিসের এতো অনীহা?”
এখানেই না থেমে তিনি বলেন, “তাঁদের সমস্যা ও দুর্দশার কথা না শোনার জন্য কেন তিনি অতিমারীর দোহাই দেন? ওনার অগ্রাধিকারের তালিকায় কি পড়ে- কোন এক বিশেষ রাজনৈতিক দলের অপ্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা নাকি রাজ্যের দুর্দশাগ্রস্থ গরীব চাষীদের কথা শোনা? পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে দরিদ্র চাষীদের সমস্যা নিয়ে রাজ্যপালের কোনও চিন্তা বা মাথাব্যথা নেই।”
এই প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে যে প্রতি মরশুমের মত এবারও রাজ্যের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের ভুট্টা চাষীদের জীবন এক নিদারুন সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। কারণ তাঁরা উৎপন্ন ফসলের কেন্দ্র সরকার ঘোষিত সমর্থন মূল্য দর পাচ্ছেনা। এম.এস.পি প্রতি কুইন্টাল ১৭৬০ টাকা কিন্তু কোন সরকারী ক্রয় ব্যবস্থা ও নিয়ন্ত্রিত বাজার না থাকার জন্য অর্ধেক বা তার থেকেও কম দামে চাষীরা ফসল বেচতে বাধ্য হচ্ছে। সমর্থন মূল্যে ধান কেনার ব্যবস্থার মত ভুট্টা কেনার কোন সরকারী ব্যবস্থা নেই। স্বরাজ ইন্ডিয়া ও জয় কিষাণ আন্দোলন দীর্ঘদিন ধরেই সারাদেশে চাষীদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে যাচ্ছে এবং রাজ্যের ভুট্টা চাষীদের সমস্যা নিয়েও তাঁরা সরব হয়েছে।