বেশ কিছু দিন ধরেই মেসির বার্সা ছাড়া নিয়ে জল্পনা চলছিল। শেষ পর্যন্ত ভারতীয় সময় মঙ্গলবার গভীর রাতে এক বুরোফ্যাক্সের মাধ্যমে তিনি ক্লাবকে জানান, তাঁকে অবিলম্বে ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসেবে ছেড়ে দেওয়া হোক। মেসির চুক্তি সামনের বছর পর্যন্ত রয়েছে। সেই চুক্তিতে এটাও রয়েছে যে, প্রত্যেক বছর জুনে মরসুম শেষে তিনি ‘ফ্রি’ ফুটবলার হিসেবে চলে যেতে পারেন। অন্য কোনও সময়ে তাঁকে নিতে হলে বার্সেলোনাকে ৭০০ মিলিয়ন ইউরো দিতে হবে ‘বাইআউট ক্লজ’ হিসেবে। অর্থাৎ, তাঁর ক্লাব বার্সেলোনার হাতে এই টাকাটা তুলে দিতে হবে সেই ক্লাবকে।
কিশোর বয়স থেকে যে ক্লাবের অ্যাকাডেমি লা মাসিয়ায় তাঁর ফুটবলার হিসেবে বেড়ে ওঠা এবং জীবনে যে ক্লাব ছেড়ে কখনও যাননি, তাদের সঙ্গেই এবার বিচ্ছেদের লগ্ন উপস্থিত। সম্পর্ক এখন এমনই তলানিতে পৌঁছেছে যে, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে তিনি বার্তায় লিখেছেন, এ বারে কোভিড-১৯ অতিমারির কারণে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেক দিন ধরে থেমে থাকার পরে ফুটবল মরসুম সবে শেষ হয়েছে। তাই জুন নয়, এখনই মরসুম শেষের সময় ধরতে হবে। সেই কারণে ‘ফ্রি প্লেয়ার’ হিসেবে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হোক।
অন্যদিকে উল্টো মত হচ্ছে, মেসির চুক্তির এই ধারা কার্যকর করতে গেলে মেসিকে ১০ জুনের মধ্যে ক্লাব ছাড়ার কথা জানাতে হত। এতকাল মেসি আর বার্সেলোনা সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। এখন যা পরিস্থিতি, মেসি বনাম বার্সেলোনা সংঘাত শুরু হয়ে গিয়েছে। আর এই আইনি যুদ্ধ কোর্ট অব আরবিট্রেশন ফর স্পোর্ট পর্যন্ত গড়ালেও অবাক হওয়ার নেই।
দু’টো কারণ শোনা যাচ্ছে মেসির ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার পিছনে। ক্লাব প্রেসিডেন্ট জোসেফ বার্তোমিউয়ের সঙ্গে একেবারেই বনিবনা হচ্ছে না তাঁর। দ্বিতীয়ত, নতুন ম্যানেজার রোনাল্ড কোমান এসে মেসির প্রিয় সতীর্থ লুইস সুয়ারেস-সহ একাধিক ফুটবলারকে ক্লাব ছাড়তে বলেছেন। এর মধ্যে সুয়ারেসকে জানানো হয়েছে ফোন করে। মেসি যা নিয়ে ভীষণই ক্ষুব্ধ। তাঁর মনে হয়েছে, খেলোয়াড়দের অসম্মান করছে ক্লাব। কোমান নাকি মেসিকেও মুখোমুখি বৈঠকে বলেছেন, আলাদা কোনও সমাদর তাঁর আমলে আশা করে লাভ নেই। এতেই ক্রমশ অগ্নিগর্ভ হতে থাকা সম্পর্কে ঘি পড়েছে।
তবে তাঁর প্রাক্তন এবং বর্তমান সতীর্থরা মেসির পাশে দাঁড়িয়েছেন। যেমন কার্লেস পুওল টুইট করেছেন, ‘‘তোমার প্রতি শুধু সম্মান আর মুগ্ধতা রয়েছে, লিও।’’ সুয়ারেজ আবার স্মাইলি দিয়ে সেই টুইটকে স্বাগত জানিয়েছেন। বিশ্ব জুড়ে চাঞ্চল্য পড়ে যাওয়ার মধ্যে ব্যাকফুটে বার্সেলোনা। বুধবার রাতের দিকে বার্সার স্পোর্টিং ডিরেক্টর রামন প্লেনস বলেছেন, তাঁরা এখনও মেসিকে মধ্যমণি করে দল গড়তে চাইছেন। ছ’বারের ব্যালন ডি’অর জয়ী মেসি ৬৩৪ গোল করে ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা। প্লেনস বলেছেন, ‘‘যা হয়ে গিয়েছে, হয়ে গিয়েছে। বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে নেতৃত্বে রেখে আমরা আবার বিজয়ী দল গড়ে তুলতে চাই। বার্সা আর লিও একটা বিয়ের মতো। বিচ্ছেদ কেউ চায় না।’’
শুধু তিনি একা নন, গোটা বার্সেলোনা জুড়ে তোলপাড় চলছে। শহরের মেয়র পর্যন্ত মন্তব্য করেছেন, ‘‘আমি আশা করব, ওরা যা যা করা দরকার সব করবে লিওকে ক্লাবে ধরে রাখার জন্য। মেসিকে বার্সেলোনাতেই দেখতে চাই।’’ সাংঘাতিক প্রতিক্রিয়া হয়েছে ক্লাবের অন্দরে। জোরাল হচ্ছে প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের দাবি। একাংশের দাবি, বার্তোমিউয়ের ইস্তফাই এখন একমাত্র ফিরিয়ে আনতে পারে মেসিকে। আবার অন্য পক্ষ বলছে, শুধু প্রেসিডেন্টের পদত্যাগই মেসির থেকে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট হবে না। তাঁদের বক্তব্য, অবিলম্বে ক্লাবের নির্বাচন করে নতুন পদাধিকারীদের আনো, তবেই একমাত্র লিওকে রাখা সম্ভব হবে।