অগ্রিম দু’লক্ষ টাকা না দেওয়ায় চিকিৎসাই পাননি পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক শহর সংলগ্ন বাড়খোদা গ্রামের বাসিন্দা লায়লা বিবি। ডিসান হাসপাতালের বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে পড়ে থেকে মৃত্যু ঘটে ওই করোনা রোগিণীর। এবার সেই ঘটনায় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করল স্বাস্থ্য কমিশন। আজ, বুধবার একটি হোয়াটসঅ্যাপ অডিও বার্তার মাধ্যমে একথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারম্যান প্রাক্তন বিচারপতি অসীম বন্দোপাধ্যায়।
রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনের ইতিহাসে এই প্রথম কোনও বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মামলা রুজু করার ঘটনা ঘটল। এ প্রসঙ্গে অসীমবাবু বলেন, ‘এই ঘটনা অমানবিক ও দুঃখজনক। আমরা সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, হাসপাতালে দীর্ঘক্ষণ পড়ে থেকেই ওই মহিলার মৃত্যু হয়েছিল।’ ডিসানে নিয়ে আসার আগে করোনা আক্রান্ত প্রৌঢ়া লায়লা বিবি যে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, সেখান থেকেও সমস্ত তথ্য তলব করা হয়েছে। সে তথ্য কমিশনের হাতে এলে আগামী ১৯ আগস্ট এই মামলার শুনানি হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, ৮০ হাজার টাকা দিয়ে আগাম বেড বুক করে সোমবার রাত আটটা ৫০ নাগাদ তমলুকের বাসিন্দা লায়লা বিবিকে ডিসান হাসপাতালে আনা হয় অ্যাম্বুল্যান্সে করে। অভিযোগ, আরও ২ লক্ষ ২০ হাজার টাকা অর্থাৎ মোট ৩ লক্ষ টাকা জমা দিতে না পারায় ভর্তিই নেওয়া হয়নি তাঁকে। শেষমেশ হাসপাতালের বাইরে দেড় ঘণ্টা পড়ে থেকে রাত ১০টা ২০ নাগাদ অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই প্রাণ হারান ৬০ বছরের লায়লা বিবি। যদিও তার আগেই রাত সাড়ে ন’টা নাগাদই আরও ২ লক্ষ টাকা জমা করা হয়েছিল হাসপাতালের অ্যাকাউন্টে। তার পরেও রোগিণীকে ভর্তি নেওয়া হয়নি বলে জানিয়েছে পরিবার।
মৃত লায়লা বিবির জামাই সইফুল্লা বলেন, ‘বিকেলে ৮০ হাজার টাকা জমা দিয়ে বেড বুক করে রেখে, রাত ৮টা ৫০ মিনিটে আমরা মাকে নিয়ে এসে পৌঁছই। কিন্তু আমাদের বলা হয়, আরও ২ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা করলে তবেই রোগীকে ভর্তি নেওয়া হবে। আমি জানাই, আমার কার্ডের লিমিট আজকের মতো শেষ, রাত ১২টা হলেই আমি পেমেন্ট করে দেব। আপনারা চিকিৎসা শুরু করুন। কিছুতেই রাজি হননি তাঁরা। শেষমেশ আমার শ্যালক আবুধাবি থেকে ২ লাখ টাকা পাঠান। সেই ট্রানজ্যাকশন ডিটেলও আমরা দেখাই। তবু আমাদের বলা হয়, টাকা ক্রেডিট না হলে কিছু করা হবে না।’
অন্যদিকে, মৃতার ছেলে নাজিমের সাফ কথা, ‘আমরা চাই এই গাফিলতির জন্য যাঁরা দায়ী, তাঁদের শাস্তি হোক। আর মায়ের মতো যেন এ ভাবে বিনা চিকিৎসায় কারও মৃত্যু না হয়।’ তিনি জানিয়েছেন, তাঁরা আনন্দপুর থানার পাশাপাশি স্বাস্থ্য কমিশনেও অভিযোগ দায়ের করেছেন। সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই অভিযুক্ত বলে মনে করছে স্বাস্থ্য কমিশন। তাই ডিসানের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করে কার্যত ইতিহাস গড়ল তারা। এর পাশাপাশি স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম জানিয়েছেন, রোগীর পরিবারের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্তকমিটি গঠন করা হয়েছে।