বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। তার আগে রাজ্যবাসীকে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপহার দেওয়ার ধারা অব্যাহত। কলকাতা সহ জেলাগুলির ২৮ হাজার পুজোকমিটির জন্য উপহার ঘোষণার পর, এবার তিনি পুজোর উপহার দিলেন রাজ্যের সিভিক ভলান্টিয়ার ও নার্সিং স্টাফদের।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর কলকাতা শহর ও জেলায় সিভিক ভলান্টিয়ার নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৃণমুল সরকার। শুরুর দিকে তাঁদের বেতনের পরিমাণ ছিল ২,৮০০ টাকার মতো। ২০১৬ সালের শুরুতে তা বাড়িয়ে করা হয় ৫৫০০ টাকা। আরও একবার সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে সিলমোহর দিল রাজ্য মন্ত্রিসভা। মাসে আড়াই হাজার টাকা বেতন বৃদ্ধি হচ্ছে তাঁদের। মন্ত্রিসভার এই সবুজ সঙ্কেতের ফলে আগামী অক্টোবর মাস থেকে সিভিক ভলান্টিয়ারদের বেতন ৫৫০০ টাকা থেকে বেড়ে হচ্ছে ৮ হাজার টাকা। আগামী ১ অক্টোবর থেকেই বেতন বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। এ জন্য রাজ্য কোষাগার থেকে বাড়তি ৩৯২.৩৯ কোটি টাকা খরচ হবে। মুখ্যমন্ত্রী সিভিক ভলান্টিয়ারদের জুনিয়র হোমগার্ডের পদে উন্নীত করার কথাও বলেছিলেন। যেসব সিভিক ভলান্টিয়ার ভাল কাজ করবে তাঁদের কনস্টেবল পদ দেওয়ার চিন্তাভাবনা ছিল সরকারের। ১০ শতাংশ শূন্য কনস্টেবল পদ সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার। পাশাপাশি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত সিভিক ভলান্টিয়ারদের চাকরির মেয়াদ থাকবে বলেও জানা গেছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, সিভিক ভলান্টিয়ার ছাড়াও পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী রাজ্যের ৫০ হাজার আশা এবং ২ লক্ষ ৩০ হাজার অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের ভাতাও বাড়বে অক্টোবর থেকেই।
বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পৌরোহিত্যে মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বেতন বৃদ্ধি সংক্রান্ত ওই ঘোষণা করেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। বেতন বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তে উপকৃত হবেন রাজ্যের ১ লক্ষ ২০ হাজার সিভিক ভলান্টিয়ার। মন্ত্রিসভার এদিনের বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্তে যে শুধুমাত্র সিভিক ভলান্টিয়াররাই উপকৃত হচ্ছেন তা নয়, রাজ্যের সমস্ত সরকারি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের নার্সিং স্টাফদেরও জন্য পুজোর প্রাক্কালে সুখবর শুনিয়েছে সরকার। রাজ্যের সরকারি নার্সিং স্টাফদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ থেকে বাড়িয়ে ৬২ বছর করার সিদ্ধান্ত এদিন গ্রহণ করা হয়েছে। এতে উপকৃত হবেন প্রায় ৩৫ হাজার নার্সিং স্টাফ। বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে নার্সিং স্টাফের চাহিদা মেটাতেই অবসরের বয়স বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্ত বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। প্রসঙ্গত, মা-মাটি-মানুষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র, হাসপাতাল এবং নতুন করে গড়া মাল্টি স্পেশালিটি হাসপাতাল মিলিয়ে এখন শয্যাসংখ্যা ৮৩ হাজার ৯৯১টি। সেই নিরীখে ৫০ হাজার নার্সের প্রয়োজন পড়লেও, রাজ্যে এখন কিছু ঘাটতি রয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, নার্সিং স্টাফের ঘাটতি মেটাতে একদিকে যেমন ২৭টি জেনারেল নার্স অ্যান্ড মিডওয়াইফারি (জিএনএম) স্কুল চালু করা হয়েছে, তেমনই কর্মরত নার্সদের অবসরের বয়স বাড়িয়ে শয্যার সঙ্গে নার্সিং স্টাফের সংখ্যার একটা সাযুজ্য আনার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
এদিন রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়। তাপবিদ্যুতের পাশাপাশি রাজ্যে জলবিদ্যুতের ব্যবহার আরও বাড়াতে পুরুলিয়ার বাঘমুণ্ডির তুরগাতে পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পের কাজটিতে ছাড়পত্র দিল মন্ত্রিসভা। এই বিষয়ে সাংবাদিকদের চন্দ্রিমাদেবী জানিয়েছেন, ৬৯২১.৯ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি হবে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি। প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টা করে পাম্প চালিয়ে হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবে এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পাম্প স্টোরেজ প্রকল্পটির জন্য মোট ২৯২ হেক্টর জমি প্রয়োজন। তার মধ্যে বনাঞ্চল নয়, এমন ২৩৪ হেক্টর জমির ব্যবস্থা গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই করে ফেলেছিল রাজ্য সরকার। সিদ্ধান্ত গৃহীত হওয়ার পর, এবার দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শুরু করে দিতে চায় তারা।