২ বছর আগে এশিয়ান গেমসের হেপ্টাথলনে অসহ্য দাঁতের ব্যথা উপেক্ষা করে টুর্নামেন্ট থেকে সোনা ছিনিয়ে এনেছিলেন জলপাইগুড়ির রাজবংশী পরিবারের মেয়ে। জাকার্তায় তুলে ধরেছিলেন দেশের জাতীয় পতাকা। কিন্তু, পাতকাটার ঘোষপাড়ায় নিজের এলাকাতেই শুনতে হচ্ছে এশিয়াডের সোনা নাকি কিনে আনা! লকডাউনের উত্তরবঙ্গে এটাই শুনতে হয়েছে দেশের অন্যতম সেরা অ্যাথলিট স্বপ্না বর্মনকে। মুখ বুজে শুনছেন কটূক্তি, সহ্য করছেন অপমান। আর এটাই হজম হচ্ছে না। দেশের হয়ে গৌরব আনার পর এটাই কি প্রাপ্য, প্রশ্ন করছেন নিজেকেই।
বাংলা তথা দেশের সোনার মেয়ে বললেন, “আমাকে এখানে তো অনেকে বলেছে যে, এশিয়াডের এই মেডেল-ফেডেল তো কিনেও আনা যায়! ভাবা যায়!” খানিকটা হাসিই ভেসে এল। তবে তা যে যন্ত্রণার, সেটা বোঝা গেল পরের কথায়, “আমি শুধু ভাবলাম, এগুলোও নাকি কেনা যায়। এতই সোজা! আদৌও আমি কলকাতায় প্র্যাকটিস করছি কিনা, সেটা নিয়েও বলছে কেউ কেউ। আমি তাঁদের নাম জানাতে চাইছি না। কিন্তু এগুলো আমায় বলা হচ্ছে। দেশকে সোনা দেওয়ার পর এটাই প্রাপ্য ছিল? আপনারাই ভাবুন।”
প্রসঙ্গত, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে বাড়ি ফিরেছিলেন স্বপ্না। ভেবেছিলেন, দিন সাতেক গ্রামের বাড়িতে থেকে কলকাতায় ফিরবেন। কিন্তু পুরো পৃথিবীই যে বদলে যাবে আচমকা, টের পাওয়ার কথা ছিল না তাঁরও। করোনা ভাইরাসের দাপটে গৃহবন্দী কয়েক মাসে শেষ অবধি তাঁর উপলব্ধি হল যে, নিজের পাড়াতে তাঁকে ঘিরে আবেগও বদলেছে। যেখানে একদা সংবর্ধনা সঙ্গী হত, এখন তাঁর সেই নিজের পাড়াতেও জুটছে টিপ্পনী, মোকাবিলা করতে হচ্ছে সিলেবাসের বাইরের সব সমস্যার।
সব কিছু ঝেড়ে ফেলে কলকাতা ফিরে সাইয়ের মাঠে অনুশীলনে নামার ইচ্ছা থাকলেও তা সম্ভব হয়নি এখনও। অগত্যা, বাড়ির উঠোনেই চলছে প্রস্ততি। যা অবশ্য অনেক গালভরা শব্দ। আসলে উঠোনে ঘণ্টা দেড়েক ফ্রি-হ্যান্ড করা ছাড়া আর সে ভাবে কিছুই হচ্ছে না। একটু যে দৌড়বেন, সেই সুযোগও নেই। জলপাইগুড়ি শহরেও কোভিডের বাড়বাড়ন্ত যথেষ্ট। ফলে, জিমে যাওয়ার পরিস্থিতিও তৈরি হয়নি এখনও।