বিগত কয়েক পুরুষ ধরে আখ চাষ করেই সংসার প্রতিপালন করেন পুরুলিয়ার আরশা ব্লকের সিরকাবাদের দশ-বারোটি গ্রামের মানুষ। সেচের জলের অভাব থাকায় বিকল্প চাষের কোনও উপায় নেই। তাই আখচাষই ভরসা। কিন্তু এবারের করোনা পরিস্থিতি আর লকডাউন অনিশ্চয়তার সামনে ঠেলে দিয়েছে পুরুলিয়ার আখ চাষিদেরও। আখের ক্রেতা নেই, নেই আখের গুড়ের ক্রেতাও। পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে সব। কীভাবে চলবে পেট, তা ভাবতে পারছেন না সিরকাবাদের চাষিরা।
আরশা ব্লকের সিরকাবাদ মানেই আখ চাষ। বিঘের পর বিঘে জুড়ে শুধুই আখের খেত। চাষের জন্য কোনও রাসায়নিক সার ব্যবহার না হওয়ায় এখানকার আখ থেকে যে গুড় তৈরি হয় তা স্বাদে-গুণে অত্যন্ত উৎকৃষ্ট মানের। সিরকাবাদে দুই থেকে আড়াই একর জমিতে আখ চাষ হয়। দশ বারোটা গ্ৰামের মানুষ এই আখ চাষের উপর নির্ভরশীল। সিরকাবাদের বাসিন্দা আখ চাষি বিপদতারণ কুইরী বলেন, ‘‘এলাকায় সেচের জলের খুবই অভাব। তাই আখ চাষের জন্য জমি তৈরি করতে এক বছর সময় লেগে যায়। প্রত্যেক জমিতে দু’বছর অন্তর একবার করে ফলন হয়।’’
প্রায় ৬০ থেকে ৭০ বছরের পুরনো বীজ থেকে আখ চাষ হয় সিরকাবাদে। শুধুমাত্র পুরুলিয়া নয়, হাওড়া, কলকাতা, বাঁকুড়া, আসানসোল, রাঁচি, ধানবাদেও যায় এখানকার আখ এবং গুড়। কিন্তু এবার সব মাঠে মারা গেছে। লকডাউনের জন্য এবছর মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত সিরকাবাদে আখ চাষিরা। অনেকের মাঠের ফসল মাঠেই শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। কারণ বাইরে পাঠানোর কোনও উপায় ছিল না।
এখানকার আখ চাষি বিভূতিভূষণ সেন বলেন, ‘‘ফসল তুলে কী করব? কোথায় পাঠাব? তাই মাঠের ফসল মাঠে রেখেই খরচ আর পরিশ্রম বাঁচিয়ে দিয়েছেন অনেকেই।’’ কেউ কেউ যাঁরা সাহস করে মাঠের ফসল ঘরে এনে গুড় তৈরি করেছিলেন, সে গুড়ও ঘরে পড়ে থেকেই নষ্ট হয়েছে। তাই চরম অভাব আর ঘোর অনিশ্চয়তা ঘিরে ধরেছে এখানকার চাষিদের।
যদিও আরশা ব্লকের বিডিও অমিতকুমার গায়েন বর্তমান পরিস্থিতিতে আখ চাষিদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি জানান, সিরকাবাদের আখ চাষিদের একটা সমস্যা হচ্ছে। একটা রোগ পোকার আক্রমণ হচ্ছে বলে অনেক চাষি জানিয়েছেন। বিষয়টা রাজ্যের কৃষি দফতরকে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘‘সবথেকে বড় সমস্যা হচ্ছে লকডাউনের জন্য। কারণ এখানে উৎপাদিত ফসলের সিংহভাগই বাইরে চলে যায়। আখ এবং গুড়ের বাজার রয়েছে বাইরের জেলা এমনকী বাইরের রাজ্যেও। মাল না পাঠাতে পারায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন চাষিরা। আমরা এই বাজার আবার ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছি।”