কাজের জন্য বাড়ি ছেড়েছিলেন তিনি। কিন্তু দেশে টানা লকডাউন জারি থাকায় আপাতত সেই কাজ হারিয়েছেন। জমানো টাকাও প্রায় শেষের দিকে। এদিকে ট্রেন বন্ধ থাকায় বাড়ি ফেরার উপায় নেই। কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে লড়তে লড়তেই তরুণী খবর পান গ্রামের বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাঁর সন্তান। সন্তানের অসুস্থতার খবর পেতেই দ্বিতীয়বার আর ভাবেননি সেই তরুণী। নিজের পুরনো বাইকে চেপেই পথে নামেন। এরপর টানা পাঁচ দিনের পথ পেরিয়ে পুণে থেকে পৌঁছন জামশেদপুরে। অসুস্থ ছেলেকে বুকে আঁকড়ে ধরতে এই মা যে সাহস দেখিয়েছেন, তাতে মুগ্ধ গোটা দেশ।
জামশেদপুরের কাদমা এলাকার ভাটিয়া বস্তির বাসিন্দা সোনিয়া দাস। ছাব্বিশ বছরের তরুণী কর্মসূত্রে ছিলেন পুণেতে। লকডাউনে চাকরি খুইয়েছেন। সোনিয়া বলেছেন, আনলক পর্যায়ে ট্রেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুণে থেকে জামশেদপুরে ফিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ। তরুণীর কথায়, “পুণেতে কোনও রকমে দিন কাটছিল। এর মধ্যেই স্বামী খবর দেন আমাদের পাঁচ বছরের ছেলে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রবল জ্বর। কিছুতেই শরীর ঠিক হচ্ছে না। এই খবর পাওয়ার পরেই আর স্থির থাকতে পারিনি।”
ফোনে স্বামী অভিষেকের সঙ্গে কথা হওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই ছটফট করতে শুরু করেন তরুণী। কীভাবে ফিরে যাবেন বাড়িতে, কীভাবে সন্তানকে কোলে টেনে নেবেন, এই চিন্তাতেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে ওঠেন। এদিকে ট্রেন বন্ধ, বিমানের টিকিট কাটারও সামর্থ্য নেই। পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফিরবেন কি? এমন চিন্তাও মনে উঁকি দিয়েছিল, জানিয়েছেন তরুণী। সোনিয়া বলেছেন, মহারাষ্ট্র সরকারের হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। ওদিকে ঝাড়খণ্ড সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। তাতেও ফল মেলেনি।
এরপরই নতুন উপায় ঠিক করেন তিনি। সোনিয়া বলেন, তাঁর একটা পুরনো বাইক ছিল। তাতে চেপেই জামশেদপুরে যাবেন ঠিক করেন। পাশে পেয়ে যান এক বান্ধবীকেও। পুণে থেকে জামশেদপুরের পথ কম করেও ১৮০০ কিলোমিটার। এই দীর্ঘ পথ যেতে সময় লাগবে। তার উপরে লকডাউনে দোকানপাট, হোটেল-রেস্তোরাঁ প্রায় সবই বন্ধ। রাতের সময় মাথা গোঁজার ঠাঁই নাও মিলতে পারে। শুনশান রাস্তায় বিপদের ঝুঁকিও আছে। তবে এইসব কিছুই তাঁর কাছে তুচ্ছ হয়ে দাঁড়ায়। পথের দূরত্ব বা নিজের সুরক্ষার থেকেও বড় চিন্তা ছিল ছেলেকে বুকে আঁকড়ে ধরা। তাই লক্ষ্য স্থির করতে বেশি সময় নেননি সোনিয়া। ৫ দিন ধরে বাইক চালিয়ে জামশেদপুরে পৌঁছন। সোনিয়ার কথায়, “পথের কষ্টের কথা ভুলে গিয়েছি। জামশেদপুরে নিজেদের এলাকায় ঢোকার পরেই মনে শান্তি ফিরে আসে।”