গোপালকৃষ্ণ গোখলে এক সময় বলেছিলেন, ‘বাংলা আজ যা ভাবে, দেশ তা কাল ভাবে।’ এই দাবি যে আদৌ ভ্রান্ত নয়, বারবারই তা প্রমাণ করে দিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর আমলে আজ সর্বক্ষেত্রেই ‘এগিয়ে বাংলা’। অন্যান্য রাজ্যগুলির কাছেও নানা বিষয়ে রোল মডেল হয়ে উঠেছে এ রাজ্য। এবার সাইবার যুদ্ধে ভারতকে জয়ী করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ, পেশাদার সেনানী তৈরি হচ্ছে বাংলায়। এই রাজ্যেই গড়ে উঠেছে সারা দেশের মধ্যে প্রথম ‘সেন্টার অফ এক্সেলেন্স’ যা যে কোনও ধরনের সাইবার হানাদারির মোকাবিলায় ভারতের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করবে।
রাজ্য সরকারের ওয়েবেল জাপানের বহুজাতিক সংস্থা ফুজিসফ্ট ও ভারতীয় সংস্থা ভারা-র সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে রাজারহাট নিউটাউনে গড়ে তুলেছে ‘ওয়েবেল ফুজিসফ্ট ভারা সেন্টার অফ এক্সেলেন্স ইন ইন্ডাস্ট্রি ৪.০’। রাজ্য সরকারের এক কর্তার কথায়, ‘সারা ভারতে এ ধরনের উৎকর্ষ কেন্দ্র দ্বিতীয়টি নেই। এখানে সাইবার নিরাপত্তা, ডেটা সায়েন্স, থ্রি-ডি/অ্যাডিটিভ ম্যানুফাকচারিং এবং আইওটি-র ওপর যে কোর্সগুলি রয়েছে, সেগুলির কোনও একটি করলেই কাজের অভাব হবে না। ডেটা সায়েন্স ও থ্রি-ডি প্রিন্টিংয়ে ফুজিসফ্ট-এর দক্ষ ও প্রশিক্ষিত মানবসম্পদের যে বিপুল চাহিদা রয়েছে, তাতে তারাই কোর্স পাস করা ছাত্রছাত্রীদের একটা বড় অংশকে নিজেদের সংস্থাতেই নিয়োগ করবে। বাকিদের চাকরি পাওয়াটাও নিশ্চিত।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, যে চারটি ক্ষেত্রে এই উৎকর্ষ কেন্দ্রটি অরিজিন্যাল ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফাকচারার (ওইএম)-দের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধে দক্ষ ও প্রশিক্ষিত ইন্ডাস্ট্রি-রেডি মানবসম্পদ সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা অত্যন্ত সময়োপযোগী এবং দূরদর্শিতার পরিচয়। কারণ, করোনা জনিত নিউ নর্মাল পরিস্থিতি তো বটেই ভবিষ্যতেও প্রযুক্তি যে দিকে যাচ্ছে, তাতে সাইবার নিরাপত্তা, ডেটা সায়েন্স বা আইওটি-ই মূল চালিকাশক্তি হতে চলেছে। কেন্দ্রটি সাইবার নিরাপত্তার যে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট সার্টিফিকেট কোর্সটি কিছু দিনের মধ্যেই চালু করবে, সেখানে সম্পূর্ণ সাইবার রেঞ্জের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ধরনের বাণিজ্যিক সাইবার রেঞ্জ প্রশিক্ষণ ভারতে প্রথম বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
রাজ্যে প্রচুর নয়া কর্মসংস্থান সৃষ্টির পাশাপাশি নতুন শিল্পোদ্যোগী গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিল্পবাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র গত বছর অনুষ্ঠিত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট (বিজিবিএস)-এ ফুজিসফ্ট-এর কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবটির বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছিলেন। রাজারহাট নিউটাউনের উৎকর্ষ কেন্দ্রে মূলত প্রশিক্ষণের জন্য ফুজিসফ্ট কয়েকটি থ্রি-ডি প্রিন্টিং মেশিন ইতিমধ্যেই বসিয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, থ্রি-ডি প্রিন্টিং মেশিন রাজ্যে ফুজিসফ্ট বসালে ছোট ও মাঝারি শিল্পসংস্থাগুলি তাদের নয়া পণ্যের মোল্ড সেখানে তৈরি করতে পারবে, যে সুযোগ ভারতের কোথাও নেই। ফলে, রাজ্যে এমএসএমই ক্ষেত্রে যে জোয়ার আসবে তাতে বিপুল সংখ্যক নয়া কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা অত্যন্ত উজ্জ্বল।