গত রাতে মাত্র চার ঘণ্টার ব্যবধানে শহরের দুই প্রান্তে আত্মহত্যার হাত থেকে দুই তরুণ-তরুণীর জীবন বাঁচাল কলকাতা পুলিশ। সূত্রের খবর, গতকাল দু’জনেই নিজেদের জীবন শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। দু’জনেই সোশ্যাল মিডিয়ায় গভীর রাতে পোস্ট করেন ‘বিদায়’। দু’টি ঘটনাই নজরে আসে কলকাতা পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগের। সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা ওই যুবক এবং তরুণীকে খুঁজে বার করে শেষ মুহূর্তে তাঁদের প্রাণ রক্ষা করে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার রাত ১টা নাগাদ সাইবার ক্রাইম বিভাগের অফিসাররা ফেসবুকের তরফে একটি ই-মেল পান। সেখানে এক ফেসবুক ইউজারের কথা জানানো হয়। কলকাতা পুলিশকে সতর্ক করে ফেসবুক জানায়, ওই ইউজার এমন কিছু পোস্ট করেছেন যাতে তাদের সন্দেহ হচ্ছে, তিনি আত্মহত্যা করার চেষ্টা করছেন।
কলকাতা পুলিশ দ্রুত ওই ইউজারের আইডি থেকে তাঁর ইন্টারনেট প্রোটোকল অ্যাড্রেস খুঁজে বার করে। তার সাহায্যেই খুঁজে বার করা হয় ওই ব্যক্তির মোবাইল নম্বর। সেই নম্বরের সূত্র ধরে পর্ণশ্রী থানা এলাকার আদর্শ নগরের ঠিকানা পাওয়া যায়। সাইবার ক্রাইম বিভাগের আধিকারিকরা সতর্ক করেন পর্ণশ্রী থানাকে। সেখানকার আধিকারিকরা ওই ঠিকানায় পৌঁছে উদ্ধার করেন বছর বাইশের এক তরুণকে। জানা যায় ওই তরুণ বেশ কিছু দিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তিনি এ বছরের মার্চ মাস থেকে অ্যাপ-ক্যাব চালানো শুরু করেন। কিন্তু তার পরেই লকডাউন শুরু হয়ে যায়। পেশাগত এবং ব্যক্তিজীবনেও কিছু সমস্যার জন্য তাঁর অবসাদ ছিল। তারপরই তিনি আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন ওই তরুণ।
এদিকে, ওই তরুণের উদ্ধার প্রক্রিয়া শেষ হতে না-হতেই ভোর চারটে নাগাদ সাইবার ক্রাইম বিভাগের আধিকারিকরা কলকাতা পুলিশের কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে হাওড়ার বাসিন্দা শীর্ষেন্দু ত্রিবেদীর ফোন পান। শীর্ষেন্দু পুলিশকে এক ইনস্টাগ্রাম ইউজারের কথা জানান। ওই ইউজারও ইনস্টাগ্রামে আত্মহত্যা করার ইঙ্গিত দিয়েছেন বলে হাওড়ার ওই বাসিন্দার কাছ থেকে জানতে পারে পুলিশ। সেই ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে আরও একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের হদিশ পান আধিকারিকরা। সেখান থেকেই পাওয়া আইপি অ্যাড্রেসের সূত্র ধরে ফোন নম্বর এবং ঠিকানা পাওয়া যায়।
দেখা যায় ওই ইউজার এক তরুণী। তাঁর বাড়ি নেতাজিনগর থানা এলাকার লোটাস পার্কে। সাইবার ক্রাইম বিভাগ থেকে ফোন পেয়ে ওই বাড়িতে পৌঁছয় নেতাজিনগর থানার পুলিশ। এ ক্ষেত্রেও পুলিশ সফল হয় ১৮ বছরের ওই তরুণীর প্রাণ রক্ষা করতে। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে যে, ওই তরুণী ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত। পুলিশের ধারণা, সম্পর্কের টানাপোড়েন ঘিরেই অবসাদে ভুগছিলেন ওই তরুণী। আর এরপরই আত্মহত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও কলকাতা পুলিশ সর্বদা সজাগ থাকায় তাঁদের দুজনেরই এই অপচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।