লাদাখের ঘটনার পর থেকেই দেশজুড়ে চীন বিরোধী বিক্ষোভ মাত্রাছাড়া পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই পরিস্থিতিতে কঠোর পদক্ষেপের কথা ভাবছে কেন্দ্র।
২০১৭ সালের ডোকলামে একইভাবে চৈনিক আগ্রাসন দেখা গিয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় সেনার অনড় মনোভাবের কাছে শেষ পর্যন্ত রাস্তা তৈরি বন্ধ রাখতে বাধ্য হয় শি জিনপিংয়ের দেশ। সেই সময়ও বয়কট চায়না বিক্ষোভ আছড়ে পড়েছিল দেশের প্রায় প্রতিটি শহরে। মোদী সরকারের তরফে বলা হয়েছিল, চীন নির্ভরতা কমাতে ধাপে ধাপে পদক্ষেপের নীতি প্রায় চূড়ান্ত। তারপর কেটে গিয়েছে ৩ বছর। চীন নির্ভরতা কি আদৌ কাটিয়ে উঠতে পেরেছে ভারত? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে এসেছে আরেক অস্বস্তিকর তথ্য। তা হল, ২০১৭ সালের পর কমা তো দূর বরং চিন থেকে ওষুধের কাঁচা মাল আমদানির পরিমাণ বেড়েছে ২৮ শতাংশ!
বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০ অর্থবর্ষে চীন থেকে সামগ্রিক ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য আমদানি বেড়ে হয়েছে ১,১৫০ কোটি টাকা। যেখানে ২০১৫-১৬ সালে তা ছিল ৯৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ, শতকরা বিচারে তা ২৮ শতাংশ। এখানেই শেষ নয়, চীন থেকে ফার্মা পণ্যের বিভিন্ন কাঁচা মাল আমদানি বেড়েছে ৫৮ শতাংশ। অর্থের হিসেবে যা ২৭৬ কোটি টাকা। বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্য বলছে, চীন থেকে ভারতে মোট আমদানির পরিমাণ বছরে ১৫,২৫০ কোটি টাকা।
দেশের ওষুধ ব্যবসায়ীরা বলছেন, প্রতিবার চীনের সঙ্গে সীমান্তে সমস্যা হলেই বয়কটের দাবি ওঠে। কিছু ক্ষেত্রে সরকারও সেই দাবির যৌক্তিকতা বিচার করে পদক্ষেপের ঘোষণা করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই দিনের আলো দেখে না। দেশে ওষুধের কাঁচামাল তৈরির জন্য যে পরিকাঠামো তৈরি করা দরকার ছিল, তা নেই। ফলে রাতারাতি চীনকে বয়কট করতে গেলে আখেরে বিপদে পড়বে এ দেশের বিভিন্ন শিল্প।
উদাহরণ হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রকের তথ্যই দেখাচ্ছেন তাঁরা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বুনিয়াদি প্রয়োজন অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্টস বা এপিআই-এর ৭০ শতাংশই আসে চীন থেকে। যা দিয়ে সংক্রমণরোধী, ক্যান্সার চিকিৎসার বিভিন্ন ওষুধ তৈরি হয়। পেনিসিলিন বা অ্যাজিথ্রোমাইসিনের ক্ষেত্রে চীন থেকে আসে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ কাঁচা মাল। ভারতে ওষুধ শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোভিড পর্বে ভারতের ওষুধের ক্ষেত্রে চীন নির্ভরতা আরও বেড়েছে। সরাসরি ওষুধ ছাড়াও পিপিই বা টেস্ট কিটও আসছে বেজিং থেকে। পাশাপাশি, বিভিন্ন হাসপাতালে যে ভেন্টিলেটর বা যন্ত্রপাতি বসানোর কাজ চলছে, তাতেও চীনের জিনিসই ব্যবহার করা হচ্ছে।
ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্সের সেক্রেটারি জেনারেল সুদর্শন জৈন বলছেন, কোভিড পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল একটি মাত্র দেশের উপর আমদানিতে নির্ভর হলে কী অবস্থা হয়। পুরোপুরি স্বনির্ভর হওয়ার পথে এগোতে ৩-৪ বছরের সরকারি পরিকল্পনা প্রয়োজন বলে মনে করছেন তাঁরা। পাশাপাশি সুলভে জমি, সহজ শর্তে ঋণ এবং অন্যান্য পরিকাঠামো দিতে হবে সরকারকে, যাতে ভারতেও কাঁচা মালের উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে নিজের পায়ে দাঁড় করানো যায়। তা না করলে চীন নির্ভরতা কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব, বলে দিচ্ছেন দেশের সেরা ১০ টি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার মিলিত সংগঠন ইন্ডিয়ান ফার্মাসিউটিক্যাল অ্যালায়েন্স।