২০১১-র পরিবর্তনের ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্লোগান ‘বদলা নয়, বদল চাই’ অত্যন্ত পরিণত রাজনীতির ছাপ হিসেবে সাড়া ফেলেছিল। রাজ্যে পালাবদল ঘটিয়ে মমতা তা করেও দেখিয়েছিলেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত। কিন্তু আগামী বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এখন থেকেই ‘বদলার’ স্লোগান তুলে দিলেন। ‘বদলাও হবে, বদলও হবে’ স্লোগান দিয়ে তিনি বলেছেন ,‘ঢাকঢাক গুড়গুড় করছি না। বদলা না-নিলে লোকে আমাদের কাপুরুষ বলবে।’ শাসকদল তৃণমূল সমালোচনার ঝড় তুলে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছে, ‘বদল বা বদলা কোনওটাই হবে না।’
ঘটনা হল, বদলা নেওয়ার বার্তা দিয়েও বিজেপি রাজ্য সভাপতি নিজের দলেরই গুরুত্বপূর্ণ অংশের সমর্থন পাননি। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনে রাজনৈতিক সংঘর্ষে এক বিজেপি কর্মীর মৃত্যুর জন্য তৃণমূলকে দায়ী করে বৃহস্পতিবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি-সহ পোস্ট দেন দিলীপ। একই সঙ্গে ডিজিটাল পোস্টারে তিনি লেখেন, ‘বদলা হবে, বদলও হবে।’ পরে তিনি ব্যাখ্যা দেন, ‘তৃণমূলের সমাজবিরোধীদের বদলা নেব। আর যে সমস্ত সরকারি আধিকারিক আমাদের কর্মীদের উপর অত্যাচার করছেন তাঁদেরও বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ভাবে বদলা নেব।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে দিলীপের মন্তব্য দলের ক্ষতি করবে বলে মত বিজেপির অনেকেরই। স্বপন দাশগুপ্ত, মুকুল রায়, রাহুল সিনহার মতো নেতারা ঠারেঠোরে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা এই ইস্যুতে দিলীপের পাশে নেই। দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা বলেন, ‘বিজেপির একটাই পথ— শান্তি এবং উন্নয়ন। এই পথ থেকে বিজেপি সরবে না। এর থেকে বেশি কিছু বলার নেই।’ মুকুল রায়ের কথায়, ‘দিলীপ কী বলেছেন, না-জেনে মন্তব্য করব না। তবে এটা বলতে পারি, হিংসা বিজেপির কারও পথ নয়।’ রাজ্যসভার সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের বক্তব্য, ‘তৃণমূল হিংসা চালাচ্ছে। মানুষ খেপে আছে। তাই ২০২১-এ বিজেপি-ই ক্ষমতায় আসবে বাংলায়। কিন্তু দল কখনও আইনশৃঙ্খলা হাতে তুলে নেবে না। দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
দিলীপের মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে তৃণমূল। রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের প্রতিক্রিয়া, ‘বদলার কথা বলে জঙ্গীরা। বদলার কথা বলে চম্বলের ডাকাতরা। মারব, ধরব, হত্যা করব- এর বাইরে বিজেপি কোনও কথা চিন্তাই করতে পারে না। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নতুন বাংলা গড়েছেন। আর ওরা সেই বাংলার রাজনীতি-সংস্কৃতি সব ধ্বংস করছে।’ বর্ষীয়ান তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘বদলা বা বদল- কোনওটাই হবে না। ওটা ওদের স্বপ্নই থেকে যাবে। অত্যন্ত নিম্ন রুচির কথাবার্তা। দিলীপ ঘোষ স্বল্পবুদ্ধি, স্বল্পদৃষ্টির লোক।’ তিনি আরও বলেন, ‘উনি স্লোগানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুকরণ করতে চেয়েছেন। কিন্তু মমতা-সুলভ ঔদার্য দেখানোর মতো মহৎ হৃদয় নেই। মমতা স্লোগান দিয়েছিলেন, বদলা নয়, বদল চাই। তবে ওঁর (দিলীপের) কথায় কী-ই বা এসে যায়?’