কাজ হল মমতার নির্দেশেই। রাজ্যবাসীর স্বার্থে তিনি যে আবেদন করেছিলেন, সেই আবেদন ফেরাতে পারেনি কেউই। সরকারি বৈঠকের পর ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। তার আগেই কমতে শুরু করে দিল শহরের বেসরকারি হাসপাতাল ও ল্যাবগুলির কোভিড টেস্টের খরচ। শুক্রবার দেখা গেল, কোনও কোনও ল্যাবে ৪৫০০ টাকার এই মহার্ঘ পরীক্ষার খরচ কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেক। এর ফলে উপকৃত হবেন রোগীরা।
টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট। করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (হু) এটাই আগাগোড়া সবচেয়ে বড় নিদান। কিন্তু এ দেশের বেসরকারি ক্ষেত্রে জরুরি এই পরীক্ষার দর প্রথম দিকে লাগামছাড়া হয়ে পড়ায় সু্প্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করে। শীর্ষ আদালতের নির্দেশে কোভিড টেস্টের দর সর্বোচ্চ ৪৫০০ টাকায় বেঁধে দেয় ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর)। কিন্তু বাংলায় দেখা যাচ্ছিল, কেউ এই পরীক্ষার চার্জ নিচ্ছে ২৮০০ টাকা তো কেউ আবার ৪৫০০ টাকা!
বৃহস্পতিবার নবান্ন সভাঘরে কর্পোরেট স্বাস্থ্যকর্তাদের বৈঠকে ডেকে মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা বলে দেন, এই বৈষম্য করা যাবে না। রেট কমিয়ে সমতা আনার আহ্বানও জানান তিনি। ঠিক পরের দিনই দেখা গেল, সরকারি সেই ‘আবেদন’কে সম্মান জানিয়ে প্রায় সব কর্পোরেট ল্যাবই রেট কমাতে তৎপর। ফলে গতকালই কোথাও ১৫ শতাংশ তো কোথাও একেবারে ৪৭ শতাংশ কমেছে কোভিড টেস্টের খরচ।
সুরক্ষা ডায়গনস্টিকসের অধিকর্তা সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় ও ডক্টর লাল প্যাথল্যাবসের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল ম্যানেজার জ্যোতি কুমার জানাচ্ছেন, তাঁদের কোভিড টেস্টের রেট যথাক্রমে ২৮০০ থেকে ২২৫০ টাকা ও ৪৫০০ থেকে ২৪০০ টাকা হয়েছে।
কিন্তু কীভাবে রাতারাতি এতটা কমানো সম্ভব হল রেট? বিভিন্ন হাসপাতাল ও ল্যাবের কর্তারা জানাচ্ছেন, করোনার আরটি-পিসিআর পরীক্ষার জন্য যে কিট লাগে, তার খরচ কমেনি। কিন্তু আগের তুলনায় এখন পরীক্ষার সংখ্যা ঢের বেড়ে গিয়েছে বলেই পরীক্ষাপিছু খরচ কমেছে তাঁদের অনেকটাই।
শুধু কোভিড টেস্টের রেট কমানোই অবশ্য নয়। বেসরকারি হাসপাতালকে আরও রোগী-বান্ধব হওয়ার যে আহ্বান বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব জানিয়েছিলেন, তাতেও কমবেশি সকলকেই সাড়া দিতে দেখা গিয়েছে শুক্রবার।
গতকালই বেসরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে বিভিন্ন ব্যাপারে বেসরকারি হাসপাতাল-ল্যাবকে চার্জ কমানোর আবেদন জানান রাজ্যের ক্লিনিক্যাল এস্ট্যাবলিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অসীমকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস্ক, পিপিই ইত্যাদির খরচ কমানোর পাশাপাশি কোভিড টেস্টের রেট কমানোর আহ্বান জানান তিনি কর্পোরেট স্বাস্থ্যকর্তাদের উদ্দেশে।
পাশাপাশি, বিল সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ নিরসনের জন্য পদক্ষেপও করতে বলেন তিনি। বিল (প্রভিশনাল বা ফাইনাল) তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তা সব রোগীর পরিজনকে ই-মেল মারফত জানানোর পরামর্শও দেন তিনি। এর পরেই প্রাইভেট হাসপাতাল ও ল্যাব মহলে বেড়ে যায় তৎপরতা।