লাদাখের গালওয়ান উপত্যকার প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় স্থিতাবস্থা পুনরুদ্ধারে কেন্দ্রের কাছ থেকে আশ্বাস চাইলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। একইসঙ্গে চীনকে তার মূল অবস্থানে ফিরে যেতে বাধ্য করা হবে, এই মর্মে আশ্বাসও তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের কাছ থেকে দাবি করেন।
ভারত-চীন সংঘাতের প্রেক্ষিতে সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনায় ১৯ জুন, শুক্রবার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানেই কেন্দ্রের কাছে এই আশ্বাস চান সোনিয়া। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তোলেন, প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চীন এত সেনা জড়ো করল, অথচ ভারত তা আগে বুঝতে পারল না কেন? এটা কি গোয়েন্দা ব্যর্থতার কারণেই?
কংগ্রেস সভানেত্রী অভিযোগের সুরে বলেন, ‘আমরা এখনও সংকটের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দিক সম্পর্কে অন্ধকারে রয়েছি।’ নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে শুক্রবারের এই বৈঠকে ২০টি রাজনৈতিক দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং -ও। হাজির ছিলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরও।
প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সরকারকে স্বচ্ছ হতে বলে কংগ্রেস। সোমবার রাতে চীনের সঙ্গে হিংসাত্মক সংঘর্ষে ২০ ভারতীয় সেনার মৃত্যুর বিষয়েও প্রকৃত তথ্য সামনে আনতে বলেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভারতীয় সেনাদের আত্মত্যাগ বৃথা যাবে না। দেশ যে কোনও উস্কানির উপযুক্ত জবাব দেবে।’
সভায় সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের কিছু নির্দিষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। কোন তারিখে চীনা সেনারা লাদাখে আমাদের অঞ্চলে প্রবেশ করেছিল? আমাদের অঞ্চলের মধ্যে চীনাসেনারা যে ঢুকে পড়েছে, সরকার কখন তা জানতে পেরেছিল? এটা কি ৫ মে, নাকি তারও আগে?’
আমাদের সীমান্তগুলির উপগ্রহ চিত্র সরকার নিয়মিত পায় কি না, সে সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করেন কংগ্রেসের সভানেত্রী। প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সম্পর্কে গোয়েন্দারা ঠিকমতো খবরাখবর সরকারকে দিচ্ছেন কি না, সে বিষয়েও তিনি জানতে চান। এর পরেই গোয়েন্দা ব্যর্থতা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন।
ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে গত এপ্রিল থেকে পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট তিনি জানতে চান। সেইসঙ্গে কেন্দ্রের পরবর্তী পদক্ষেপ কী, সে বিষয়েও অবগত করতে বলেন। কংগ্রেস সভানেত্রীর বক্তব্য, ‘আমরা সমস্ত সুযোগ ব্যবহার করতে ব্যর্থ হয়েছি। এর ফলে ২০ জন সেনাকে হারাতে হয়েছে। পাশাপাশি আহত হয়েছে কয়েক ডজন।
কেন্দ্রে কংগ্রেসের সরকার থাকাকালীন চীন সীমান্তে মোতায়েনের জন্য ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কর্পস’-এর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যার কাজ সীমান্তের সীমান রক্ষা করা। সে বিষয়েও মোদীর কাছে জানতে চান তিনি। সামরিক বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য,মাউন্টেন স্ট্রাইক কর্পস থাকলে আজকের এই পরিস্থিতি দেখতে হতো না। যদিও মনোহর পর্রিকর প্রতিরক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন এই ‘মাউন্টেন স্ট্রাইক কর্পস’ বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি। নানা বিষয়ে সরকারকে প্রশ্ন করলেও গোটা দেশ এবং বিরোধীরা যে সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে সরকার ও সেনার পাশে রয়েছে, তা জানিয়ে দেন সোনিয়া।