পূর্বপুরুষরা চীনের বাসিন্দা হলেও বিগত দু-তিন প্রজন্ম ধরে তাঁরা বাস করেন কলকাতাতেই। তাই কয়েক দশকে তাঁরা একপ্রকার ভারতীয়ই হয়ে গেছেন। তবে নিজেদের জাতিগত পরিচিতি ও সংস্কৃতিকে আলাদা বেড়া তুলে আগলে রাখেন। কখনোই প্রকাশ্যে আসতে দেন না। বহু বছর তাঁরা কলকাতায় রয়েছেন। ব্যবসা বাণিজ্য, থাকা খাওয়া এখানেই। তাই ষাটের দশকে যখন ভারত ও চীন যুদ্ধে জড়িয়েছিল, তখন টানাহেঁচড়ায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়েছিল তাঁদের। দু’দেশের রাজনৈতিক টানাপোড়েনে এখনও নীরবতাই শ্রেষ্ঠ পন্থা ওঁদের। তবুও তাঁদের মধ্যে এক পরিবারের সঙ্গে কথা হল, ট্যাংড়ার বাসিন্দা লি পরিবার। তাঁরাও বললেন, ‘ভারতই আমাদের দেশ। চীনকে উচিত জবাব দিক ভারত, সেটাই চাই।’
ভারতে থাকা চীনাদের সিংহভাগ থাকেন কলকাতার টেরিটি বাজার ও ট্যাংরা এলাকায়। করোনা আতঙ্কের মধ্যেই বারবার আঙুল তোলা হচ্ছিল তাঁদের। আর এখন তো আতঙ্কে বারবারই চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে তাঁদের। কারণ দেশজুড়ে উঠেছে চাইনিজ দ্রব্য বর্জনের ডাক। সেক্ষেত্রে লি পরিবারেরও আশঙ্কা, ভারতীয়রা চাইনিজ খাবারও বর্জন করতে পারেন। কিন্তু যদি সেটাই হয়, তাহলে তাঁদের সংসার চলবে কীভাবে? কারণ এটাই যে তাঁদের পেশা।
এমনিতেই লকডাউনে আড়াই মাস রোজগার বন্ধ ছিল তাঁদের। একদিকে পেশা সঙ্কট আরেকদিকে কৃতজ্ঞতা, কর্তব্য! লি পরিবারের মতো ট্যাংড়ার এরকম অনেক চিনা পরিবার রয়েছে, যাঁদের পূর্বপুরুষরা গত ১০০ বছর ধরে ভারতেই রয়ে গিয়েছেন, বলা ভালো কলকাতায়। চীনা পদবি থাকলেও, তাঁরা এখন মনেপ্রাণে ভারতীয়। চীনের বর্বরতার বিরুদ্ধে গর্জে উঠছেন তাঁরাও। তাই কলকাতার চীনা পরিবাররাও চায়, ‘চীনকে সমুচিত জবাব দিক ভারত।’ ট্যাংড়ার লি পরিবারের ছোটো মেয়ে ডরিস বললেন, ‘ভারতই আমার দেশ। পূর্বপুরুষ চাইনিজ হলেও, আমি তাঁদের কখনই দেখেনি। তবে ভারতীয় সৈন্যদের ওপর যারা হামলা করবে, তাদের শাস্তি পাওয়া উচিত।’