‘ব্যর্থ’ মোদীর নোট বাতিল৷ কালো টাকার এক কণাও উদ্ধার হয়নি৷ বাতিল নোটের ৯৯ শতাংশই ফিরেছে ব্যাঙ্কে। তারওপর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বার্ষিক রিপোর্ট মোদীর মুখ পুড়িয়েছে আরও। রিজার্ভ ব্যঙ্ক জানিয়েছে ৯৯.৩ শতাংশ বাতিল নোটই ফেরত এসেছে ব্যঙ্কিং ব্যবস্থায়। এই রিপোর্টের পর এখন মুখ লুকোতে হচ্ছে মোদী সরকারকে।
রিজার্ভ ব্যঙ্কের রিপোর্ট পেশের পর আমজনতার একাংশের প্রশ্ন, ব্যঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে যে ১৪০ জনের মৃত্যু হল, তাঁদের প্রাণ ফেরাতে পারবেন মোদী?
২০১৬ সালের ৮ নভেম্বর নোট বাতিলের কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তখন আর্থিক ব্যবস্থায় ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট মিলিয়ে অর্থমূল্য ছিল ১৫.৪১ লক্ষ কোটি। তার মধ্যে ১৫.৩১ লক্ষ কোটি অর্থমূল্যের নোটই ফেরত এসেছে। অর্থাত্ ১০,৭২০ কোটি অর্থমূল্যের নোট ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বাইরে চলে গিয়েছে। অথচ স্বাধীনতা দিবসের দিন লাল কেল্লা থেকে ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছিলেন নোটবাতিলের ফলে ‘২ লাখ কোটি টাকারও বেশি কালো টাকা ব্যাঙ্কে ফিরে এসেছে’। নিয়মের ফাঁকফোকর দিয়ে কালো টাকা যে বদল হয়ে গিয়েছে, তা আরবিআইয়ের পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট।
নোট বাতিলের পর নতুন নোট ছাপাতে বিশাল টাকা খরচ হয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের। পুরনো নোটের জায়গায় নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার নোট চালু করা হয়। বিমুদ্রাকরণের পর ২০১৬-১৭ সালে নতুন ৫০০, ২০০০ টাকা ও অন্যান্য অঙ্কের নোট ছাপাতে ৭,৯৬৫ কোটি টাকা খরচ করেছে আরবিআই। তার আগের অর্থবর্ষে খরচ হয়েছিল ৩,৪২১ কোটি টাকা। অর্থাত্ নোট বাতিলের পর দ্বিগুণ খরচ করেছে আরবিআই। ২০১৭-১৮ (জুলাই,২০১৭-জুন,২০১৮) নোট ছাপাতে খরচ পড়েছে ৪,৯১২ কোটি টাকা।
জাল নোট, কালো টাকা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বিমুদ্রাকরণকে হাতিয়ার করেছিলেন নরেন্দ্র মোদী। আরবিআইয়ের বার্ষিক রিপোর্ট বলছে, নোট বাতিলের পর ৫০০ এবং ১০০০ টাকার জাল নোটের সনাক্তকরণ যথাক্রমে ৫৯.৭ শতাংশ ও ৫৯.৬ শতাংশ কমে গিয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে ১০০ টাকার জাল নোটে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। বিমুদ্রাকরণের পর ৫০ টাকার জাল নোট বেড়েছে ১৫৪.৩ শতাংশ।
আরবিআইয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থ বর্ষে নতুন ৫০০ ও ২০০০ টাকার জাল নোট পাওয়া গিয়েছে যথাক্রমে ৯,৮৯২ ও ১৭,৯২৯টি। গত অর্থবর্ষে তা ছিল ১৯৯ ও ৬৩৮। অর্থাত্ পাঁচশো ও দুহাজারির জাল নোটের সংখ্যা বাড়ছে।
আরবিআই রিপোর্ট সামনে আসার পরেই সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। আর্থিক পরিসংখ্যান তো আর মিথ্যে বলে না? তাই মুখ লুকোনোর উপায় খুঁজতে হচ্ছে মোদী সরকারকে।