‘এম এস ধোনি- দ্য আনটোল্ড স্টোরি’- মহেন্দ্র সিং ধোনির এই বায়োপিকে অভিনয় করার সময় যেন একবারে সেই চরিত্রের সঙ্গে মিশে গেছিলেন সুশান্ত সিং রাজপুত। রিল আর রিয়েল লাইফ মিলেমিশে গিয়েছিল। তাই ভালোবেসে ক্রিকেট মহল সুশান্তকে ‘রূপোলি পর্দার ধোনি’ বলতেন। সেই আদরের ছেলের এহেন মৃত্যুতে তাই স্তম্ভিত ক্রীড়া মহল। সুশান্তের স্মৃতি চারণায় প্রাক্তন উইকেটকিপার কিরণ মোরে বারবার মনে করছেন কিভাবে শ্যুটিংয়ের আগে তার কাছে টানা ৯মাস প্রস্তুতি নিয়েছিল সুশান্ত।
মোরে জানাচ্ছেন ধোনির বিখ্যাত হেলিকপ্টার শট থেকে উইকেটকিপিংয়ের ভঙ্গি, সব কিছুই যিনি শিখেছিলেন ছাত্রের মতো অধ্যবসায় নিয়ে। সেই ছাত্রের এভাবে আত্মহননে স্বাভাবিক ভাবেই ভেঙে পড়েছেন তিনি।
বায়োপিকে সুশান্তকে বেশ কয়েক বার ধোনির বিখ্যাত হেলিকপ্টার শট মারতে দেখা গিয়েছে। এই বিশেষ কৌশল কী করে রপ্ত করলেন সুশান্ত? মোরের জবাব, ‘‘অনুশীলন শেষ হওয়ার পরে ও নিজেই বোলিং মেশিনের সাহায্যে একশোটি করে হেলিকপ্টার শট মারত। প্রথম তিন মাস এক বারও ঠিক মতো ব্যাটে, বলে লাগাতে পারেনি। যে দিন প্রথম বার হেলিকপ্টার শট মেরে বল মাঠের বাইরে পাঠালো, সে দিন একেবারে শিশুর মতো উচ্ছ্বসিত হতে দেখেছিলাম ওকে।’’ যোগ করলেন, ‘‘এ ভাবেই হেলিকপ্টার শট রপ্ত করতে থাকল। এর পরে বোলিং মেশিনের পরিবর্তে নেট বোলারের সামনে ব্যাটিং করতে দেওয়া হল। শুরুতে ভয় করত, ও যেন চোট না পায়। কয়েক বার চোট পেয়েওছিল। কিপিং করতে গিয়ে আঙুলে আঘাত পেয়েছে। একবার মুখেও বল লাগল। কিন্তু তার পরেও কখনও পিছু হটেনি।’’
যাঁরা মনে করেন স্টান্টম্যানের সাহায্যে ধোনির শট নেওয়া হয়েছে ছবিতে, তাঁদের ধারণা ভুল ঘোষণা করে মোরে বললেন, ‘‘ছবিতে যে ক’বার ওকে ব্যাটিং অথবা কিপিং করতে দেখা গিয়েছে, প্রত্যেকটি শটই ওর নিজের। সুশান্ত আগে ক্রিকেট খেলত। ফিল্মের জন্য আমার সঙ্গে টানা ন’মাস অনুশীলন করার পরে ওর দক্ষতা আরও বেড়ে গিয়েছিল। ধোনির চালচলন, ব্যাটিংয়ের ভঙ্গি থেকে কিপিং, সমস্ত কিছুই রপ্ত করেছিল এক বছর ধরে”।
রাঁচীতে ধোনির ছোটবেলার কোচ কেশব বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে দিন দশেক ছিলেন সুশান্ত। শোকস্তব্ধ তিনিও। ২০১৬-র ৩০ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায় ধোনির বায়োপিক। বেশির ভাগ শুটিং হয় জামশেদপুর, রাঁচী, খড়গপুরে। টানা দশ দিন কোচ কেশব বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কাজ করেন সুশান্ত। ধোনির শুরুর দিকের চেহারা ফুটিয়ে তোলার জন্য ওজন কমাতে হয়েছিল সুশান্তকে। আবার ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়া ধোনিকে তুলে ধরার জন্য ওজন বাড়াতেও হয়েছিল তাঁকে। কোচ কেশবের কাছ থেকে আসল ধোনির চালচলন সম্পর্কে জেনেছিলেন পর্দার ধোনি।
বিষণ্ণ গলায় কেশব বলছিলেন, ‘‘কী ভাবে ধোনি কথা বলত, কী ভাবে হাঁটত, সব আমাকে অভিনয় করে দেখাত। বিশ্বাস হচ্ছে না, ছেলেটা আর নেই!’’