দেশের প্রায় ৩.৫ কোটি (আইএলও-র হিসেবে ৫ কোটি ২০ লক্ষ) শিশু শ্রমিকের মধ্যে ৫৬ শতাংশ স্কুলে যায় না। সংসারের জোয়াল টানে। এটাই ভারতের পরিচিত ছবি। গত কয়েক দশক ধরে। তার ওপর এ বছর করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউন লাগু হওয়ায় তা শিশুশ্রমের আশঙ্কা কয়েকশো গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে কিছু রাজ্যে শ্রম আইনে সংশোধনী। ফলে বিপদ আরও বেড়েছে। এমনটাই মনে করছেন শিশু অধিকার কর্মী থেকে বিভিন্ন এনজিও। এমনকী মেনে নিচ্ছে সরকারও।
আজ শুক্রবার শিশুশ্রম বিরোধী দিবস। তার আগের দিন বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় নারী ও শিশু বিকাশ মন্ত্রকের এক আধিকারিকের মতে, ‘এ কথা ঠিক যে শিশুশ্রমের চাহিদা বাড়বে। সে জন্য সরকারি স্তরে নানা ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যাতে তা আটকানো যায়। তবে তা প্রায় অসম্ভব। দারিদ্রের সঙ্গে তা ওতপ্রোত ভাবে যুক্ত।’
সে আশঙ্কা থেকেই টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর অধ্যাপক রাহুল সপকল মনে করছেন, ‘শিশুশ্রমপ্রবণ বহু রাজ্যই শ্রম আইনে পরিবর্তন এনেছে। তার প্রভাব পড়বে ওদের উপরেও। বিশেষ করে যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ কাজ সেগুলো অল্প মজুরিতে বেশি কাজ করিয়ে, করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা হবে।’
ক্রাইয়ের সিইও পূজা মারওয়াহ-র কথায়, ‘যে দিন সব ভারতীয়রা বিশ্বাস করবেন গরিব বলে ১৮ বছরের নীচে আর কাউকে কাজ করতে হচ্ছে না, সে দিনই পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে। শিশুশ্রম কমাতে যা যা পদক্ষেপ করা হয়েছিল, তা যেন মুহূর্তে হরণ করে নিল কোভিড-১৯ জনিত পরিস্থিতি।’
জাতীয় শিশু সুরক্ষা অধিকার কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কানুনগো বলছেন, ‘শিশু শ্রমিক দেখামাত্র পুলিশে এফআইআর করতে হবে। এটা আমাদের সবার কর্তব্য। চুপ করে বসে থাকলে হবে না।’
কিন্তু আদৌ কি শিশুশ্রম কমানো লকডাউনের পরে সম্ভব? কৈলাস সত্যার্থীর ‘বচপন বাঁচাও আন্দোলন’ মনে করছে সম্ভব। সংস্থার বক্তব্য, ‘আমরা শিশুশ্রম আটকাতে তৈরি আছি। তবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার ও পুলিশকেও সক্রিয় হতে হবে। শিশু পাচারকারীদের ধরতে হবে।’ কারণ, পাচারের সঙ্গে শিশুশ্রমের সম্পর্ক খুবই গভীর।