বহু পরিযায়ী শ্রমিকের থেকে টিকিটের দাম নিলেও সর্বোচ্চ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছে, ‘এক টাকাও নেওয়া হয়নি।’ কিন্তু হাটে হাঁড়ি ভাঙছেন ঘরে ফেরা শ্রমিকরা। টিকিট দেখিয়ে তাঁরা বলছেন, এখানেই পষ্ট লেখা রয়েছে, ‘এই যাত্রায় ইন্ডিয়ান রেল কর্তৃপক্ষ টিকিট মূল্যের মাত্র ৫৭ শতাংশ আদায় করছে।’ অথচ ৮৫ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়ার কথা কেন্দ্রের।
শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনে টিকিট মূল্যের ৮৫ শতাংশ বহন করবে ভারতীয় রেল। বাকি ১৫ শতাংশ দেবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য। বাস্তব অন্য। বহু শ্রমিকের বক্তব্য, টিকিটের পুরো দাম আদায় করা হয়েছে। রেল মন্ত্রকের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘সরাসরি রেল টাকা নিয়েছে, এমন অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাজ্য শ্রমিকদের থেকে টাকা নিলে তার দায় রেল নেবে না।’ কিন্তু, ৮৫ শতাংশ ও ৫৭ শতাংশের বিভ্রান্তি কেন? ওই আধিকারিকের জবাব, ‘ট্রেনটি একটি রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে গিয়ে শ্রমিকদের পৌঁছে দিয়ে আবার ফাঁকা ফিরে আসছে। তাই উভয় দিকের যাত্রার বিষয়টি ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে রেলের নিজস্ব নিয়মে অপারেশনাল চার্জ ধরা হয়নি। তাই ৫৭ শতাংশ ভাড়ার উল্লেখ রয়েছে।’
তামিলনাড়ুতে আটকে পড়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের গৌরহরি জানা, গোবিন্দ প্রামাণিক। গত ২৯ মে তামিলনাড়ুর চেঙ্গালপাট্টু স্টেশন থেকে মালদা টাউনগামী ‘শ্রমিক স্পেশ্যাল’ ট্রেনে চড়ানোর আগে দু’জনের কাছে মাথাপিছু ৭৯৫ টাকা করে টিকিটের দাম নেওয়া হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, ‘দীর্ঘ যাত্রায় পানীয় জল বা খাবার কিছুই দেওয়া হয়নি। নিজেদের টাকায় কিনতে হয়েছে।’ প্রায় খালি পেটে খড়্গপুর স্টেশনে নেমেছিলেন গোবিন্দ ও গৌরহরি। দুজনেই জানাচ্ছেন, ‘খড়্গপুরে ট্রেন থেকে নামার পর রাজ্য সরকার প্রত্যেক যাত্রীকে দু’বোতল করে পানীয় জল ও খাবারের প্যাকেট দেয়।’
দু’মাস হায়দ্রাবাদে আটকে থাকার পর মেদিনীপুরে ফিরেছেন সোমনাথ মিদ্যা ও অমলেন্দু মিদ্যা। তাঁদের অভিজ্ঞতাও একই। শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের টিকিটের পুরো দাম নেওয়া হয়েছে। হায়দ্রাবাদ থেকে দুর্গাপুরগামী শ্রমিক স্পেশ্যাল ছেড়েছিল ৩০ মে। ৭০০ টাকা লেগেছে। পানীয় জল ও খাবার কিছুই মেলেনি ট্রেনে। ট্রেন থেকে নামার পর বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে রাজ্য সরকার। একই অভিজ্ঞতা মুম্বইয়ের ধারাভি থেকে বাংলায় নিজের ঘরে ফেরা তপন প্রামাণিকেরও।
সম্প্রতি বেঙ্গালুরু থেকে রায়গঞ্জে ফিরেছেন কয়েকশো শ্রমিক। তাঁদের অভিযোগ, প্রত্যেককে ৯৬০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়েছে। স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছতে অতিরিক্ত বাস ভাড়াও লেগেছে। তবে, বাংলায় ফেরার পর বাসে করে তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে বিনামূল্যে। একই অভিজ্ঞতা পুরুলিয়ার কয়েকজন শ্রমিকেরও।