কোভিড রোগীদের জন্য সুরক্ষিত নয় ম্যালেরিয়ার ওষুধ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন। এই ওষুধের ডোজের হেরফেরে রোগীদের মৃত্যুর সম্ভাবনা আরও বেড়ে যাচ্ছে। তাদের গবেষণার রিপোর্টে এমনটাই জানিয়েছে বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় ল্যানসেট মেডিক্যাল জার্নাল। আর তারপরই করোনা মোকাবিলায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা(হু)। কিন্তু ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) এখনও ভরসা রাখছে এই ম্যালেরিয়ার ওষুধেই। আইসিএমআর-এর এক পর্যবেক্ষণ বলছে, বেশি ডোজের হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিলে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কমে।
প্রসঙ্গত, করোনা মোকাবিলায় হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন, যা আদতে ম্যালেরিয়ার ওষুধ, কতটা কার্যকর তা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে চিকিৎসক মহলে। তবে সম্প্রতি আইসিএমআর-এর একটি সমীক্ষার রিপোর্ট প্রকাশ্যে এসেছে। যাতে দেখা গিয়েছে, ‘৬ বা তাঁর বেশি হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট নিয়েছেন, এমন স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনা সংক্রমণ ৮০ শতাংশ পর্যন্ত কম।’ ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘সাধারণভাবে অল্প হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নেওয়ার পরও করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা কমার কোনও প্রমাণ মেনেনি। তবে চারটি বা তাঁর বেশি পরিমাণ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট নিলে সংক্রমণের সম্ভাবনা কম হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে।’
আইসিএমআরের সমীক্ষাটিতে বলা হয়েছে, ‘হাই ডোজে’ হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন নিয়েছেন এমন ২১ হাজার ৪০২ জন স্বাস্থ্যকর্মীর মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা গিয়েছে। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যকর্মী করোনা পজিটিভ। তাছাড়া হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা বলা হচ্ছি, সেটাও তেমন গুরুতর নয়। যদিও হু-র দাবি, এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে উপকার তো হচ্ছেই না, উলটে বিপদ বাড়ছে করোনা আক্রান্তদের। কয়েকটি গবেষণায় এই তথ্যই সামনে এসেছে। যা বিবেচনা করে নিজেদের অনুমোদিত সমস্ত রকম চিকিৎসা পদ্ধতিতে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ করার নির্দেশিকা জারি করেছে তারা।
তবে এই নিষেধাজ্ঞার পরও আইসিএমআর সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার বন্ধ করেনি। টানা ৭ সপ্তাহ স্বাস্থ্যকর্মীদের একটি করে ৪০০ মিলিগ্রাম হাইড্রক্সিক্লোরোকুইন ট্যাবলেট নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। এরই মধ্যে আইসিএমআরের এই সমীক্ষা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। এই সমীক্ষার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে আগামী দিনে করোনা মোকাবিলার রণকৌশল তৈরি করতে পারে ভারত। উল্লেখ্য, এইমসের ডাক্তাররাও বলছেন, প্রফিল্যাক্সিস হিসেবে হাই রিস্ক গ্রুপের মধ্যে হাইড্রক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহার কার্যকরী হতে পারে।