করোনা সংক্রমণ ও লকডাউনের প্রতিকূল পরিস্থিতিকেই অনুকূল ব্যবসায়িক সম্ভাবনায় বদলে নিয়েছে বাংলার বহু অতি ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি একাধিক শিল্প সংস্থা। করোনা প্রতিরোধে পিপিই, মাস্ক ও গ্লাভস তৈরিতে গোটা দেশে অগ্রণী ভূমিকা নিতে চলেছে বাংলা। বিশেষজ্ঞদের হিসাবে, গোটা দেশে ২০,০০০ কোটি টাকার বাজারের মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবর্ষে ৪,০০০ কোটি টাকার পণ্য সরবরাহ করবে এ রাজ্যেরই বিভিন্ন সংস্থা।
আগামী মাসেই কলকাতা সহ দেশের বড় শহরগুলির বাজারে আসছে বাংলায় তৈরি ‘ডানলপ’ ব্র্যান্ডের করোনা-রোধক এন৯৫ মাস্ক। রুইয়া গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান পবন কুমার রুইয়া জানান, এন৯৫ মাস্ক তৈরি করার জন্য তাঁরা কলকাতার কাছে গঙ্গানগর ও রাজস্থানের নিমরানায় দুটি নয়া কারখানা গড়ে তুলেছেন। প্রতিটি কারখানায় ৪০ কোটি টাকা করে লগ্নি করেছে রুইয়া গোষ্ঠী। রুইয়া বলেন, ‘এন৯৫ মাস্ক তৈরি করার জন্য আমরা তাইওয়ান অথবা দক্ষিণ কোরিয়া থেকে প্রয়োজনীয় মেশিন আনার পরিকল্পনা করেছি। এক মাসের মধ্যে ওই মেশিন চলে আসবে বলে আমরা আশা করছি। তার পরেই কারখানা দুটিতে উৎপাদন শুরু হয়ে যাবে। তবে, ইতিমধ্যে আমরা চুক্তিভিত্তিক উৎপাদনকারীদের বরাত দিয়ে বাজারে ‘গুড কেয়ার’ ব্র্যান্ডে এন৯৫ মাস্ক নিয়ে এসেছি। জুনেই চলে আসবে ডানলপ ব্র্যান্ডের এন৯৫ মাস্ক।’ রুইয়ার দাবি, তাঁদের লক্ষ্যমাত্রা প্রতি দিন এক লক্ষ এন৯৫ মাস্ক, ২ লক্ষ সার্জিকাল মাস্ক ও মাসে ১০,০০০ পিপিই উৎপাদন করা। এতে প্রায় ৩০০ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বিশেষজ্ঞরদের মতে, মাস্ক ও গ্লাভস উৎপাদনে ভারত ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ স্বনির্ভর এবং পিপিই তৈরিতে শীঘ্র সেই কৃতিত্ব অর্জন করবে।
অন্যদিকে, রাজ্যে হোসিয়ারি সংস্থাগুলি নেমেছে মাস্ক তৈরিতে। গত ২৫ মার্চ থেকে লকডাউন চালু হওয়ার পরে শুধু এ রাজ্যে হোসিয়ারি ক্ষেত্রের ব্যবসার ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার বেশি। রূপা অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ডিরেক্টর তথা বণিকসভা এমসিসিআই-এর প্রাক্তন সভাপতি রমেশ আগরওয়াল বলেন, ‘আমরা আপাতত তামিলনাড়ুর তিরুপুরে আমাদের কারখানাতেই রোজ ৫,০০০-১০,০০০ দ্বি-স্তরীয় মাস্ক তৈরি করছি। এ রাজ্যের কারখানাতেও মাস্ক তৈরি শুরু হবে। এখন মাস্কের বিপুল চাহিদা। তবে এই বাজার দীর্ঘমেয়াদি হবে না।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমানে সারা দেশে পিপিই-র বাজার ১০,০০০ কোটি টাকা এবং সমমূল্যের বাজার রয়েছে বিভিন্ন ধরনের মাস্কেরও। টিটি লিমিটেডের কর্ণধার সঞ্জয় জৈন বলেন, ‘বাস, ট্রেন চালু না হলে সম্পূর্ণভাবে হোসিয়ারি পণ্য উৎপাদন শুরু হবে না। সব কিছু স্বাভাবিক হতে অগস্ট-সেপ্টেম্বর হয়ে যাবে মনে হচ্ছে। তাই আমরাও পিপিই স্যুট, সার্জিকাল, নর্মাল ডিসপোজেবল, নিটেড ও ডিজাইনার মাস্ক উৎপাদন শুরু করেছি। এতে শুধু কাঁচামাল কিনতে বিনিয়োগ করতে হয়েছে। এই ব্যবসা ক্ষেত্রে সরকার রপ্তানি অনুমোদন করলে বছরে ২০০ কোটি মার্কিন ডলার পর্যন্ত রপ্তানি হতে পারে। বাংলায় বছরে ৪,০০০ কোটি টাকার মাস্ক ও পিপিই আগামী এক বছরে উৎপাদন হওয়ার বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’ বর্তমানে চিনের পর ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পিপিই উৎপাদনকারী দেশ। করোনা-লকডাউনের পরে মাত্র দু’মাসের মধ্যে ভারত এই দুর্লভ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছে।