গতকালই সাংবাদিক সম্মেলনে এসে বিভিন্ন সরকারি ক্ষেত্রকে বেসরকারিকরণের কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।এবার সেই নিয়েই গোটা দেশে উঠল আন্দোলনের ঝড়। জানা গেছে, দেশের কয়লাখনিগুলিকে বেসরকারিকরণ ও শ্রম আইন প্রত্যাহারের প্রতিবাদে একযোগে আন্দোলনে নামতে চলেছে দেশের সব কটি বৃহৎ ট্রেড ইউনিয়ন। আগামী ২২ মে আসানসোলে শ্রমিক সংগঠনগুলোর জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটি ধর্ণা কর্মসূচি পালন করবে। ওই দিনই কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে দেশের প্রধানমন্ত্রী ও কয়লামন্ত্রীর কাছে প্রতিবাদপত্র পাঠানো হবে। দেশের সব জেলাশাসকদের মাধ্যমে ওই চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সবথেকে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, ওই কমিটিতে যোগ দিয়েছে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ।
বেসরকারি সংস্থার হাতে দেশের ৫০০টি কোল ব্লক তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদী সরকার। গত শনিবার এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। একই সঙ্গে দেশের বিজেপি শাসিত কয়েকটি রাজ্যে শ্রম আইন প্রত্যাহারের প্রতিবাদে সরব হয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো। রবিবার আসানসোলে জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্বে বৈঠক হয় এআইটিইউসি অফিসে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিটুর খনি শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিবেক হোমচৌধুরী।
এছাড়াও সেই বৈঠকে ছিলেন কমিটির আহ্বায়ক এআইটিইউসির রাজ্য সভাপতি রামচন্দ্র সিং, আইএনটিইউসির চণ্ডী বন্দ্যোপাধ্যায়, ইউটিইউসির সাধারণ সম্পাদক মাধব বন্দ্যোপাধ্যায়, ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের খনি শ্রমিক সংগঠনের নেতা ধনঞ্জয় পাণ্ডে, হিন্দ মজদুর সভার রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এসকে পাণ্ডে ও টিইউসিসির ভবানী আচার্য। বৈঠক শেষে রামচন্দ্র সিং বলেন, আগামী ২২ মে আসানসোল রবীন্দ্র ভবনের সামনে বিএনআর মোড়ের কাছে আমরা প্রতিবাদ জানাব।
তিনি বলেন, ‘ওই দিন জয়েন্ট অ্যাকশন কমিটির নেতৃত্বে কয়লাখনি বেসরকারিকরণের প্রতিবাদ জানিয়ে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের শ্রমিক বিরোধী আইন প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আমরা ধর্ণায় বসব। ওই দিনই আমরা একযোগে জেলাশাসকের মাধ্যমে দেশের প্রধানমন্ত্রী, কয়লামন্ত্রী এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাব। ২১ মে সন্ধ্যায় আমরা সব কটি ইউনিয়ন ফের আলোচনায় বসে পরবর্তী আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেব।’ তিনি আরও বলেন যে, ‘অতীতে যতবারই কয়লাখনি বেসরকারিকরণের চেষ্টা হয়েছে আমরা সব ইউনিয়ন ধর্মঘট ডেকে সরকারকে বাধ্য করেছিলাম সেখান থেকে সরে আসতে।’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এই সভায় যোগ দেয় ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের খনি সংগঠনের নেতা ধনঞ্জয় পাণ্ডে। তাঁর কথা, ‘শ্রমিক বিরোধী এ সব আইন আমরা মেনে নেব না। সারা দেশ জুড়ে ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ ইতিমধ্যে আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আগামী ১৮ এবং ১৯ তারিখ আমরা বিভিন্ন খনি এলাকা, শিল্প এলাকায় ইউনিটগত ভাবে এর প্রতিবাদে নামব। ২০ মে জেলাশাসকের মাধ্যমে আমরা দেশের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি পাঠাব।’ কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র বিরোধিতা করেছেন বিএমএসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক বৃজেশ উপাধ্যায়ও। তিনি বলেন, ‘কয়লাখনি, অর্ডিন্যান্স সংস্থার ক্ষেত্রে বেসরকারিকরণের কথা বলা হয়েছে। আমরা এর তীব্র বিরোধিতা করব। একই সঙ্গে শ্রমিক বিরোধী আইন ইতিমধ্যে একাধিক রাজ্যে চালু হয়েছে। তার বিরোধিতাও করছি আমরা।’