চতুর্থ দফার লকডাউন শুরুর আগে দেশকে আত্মনির্ভর হওয়ার বুলি আউড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পাশাপাশি ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের ঘোষণা করেছেন। খাতায়-কলমে দেশের জিডিপি-র ১০ শতাংশ। তবে শুনতে ভারী ভারী লাগলেও, আসলে তা নয়। বাস্তবে তা ১ শতাংশের সামান্য বেশি। এমনটাই অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
প্রসঙ্গত, মোদীর ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে কেন্দ্রের সরকারি খরচের পরিমাণ কতটা, ৬ দিন পরেও তার উত্তর মেলেনি। অর্থ মন্ত্রক সূত্র ও আর্থিক বিশ্লেষকদের হিসেবে, সরকারের ঘর থেকে মাত্র ২ লক্ষ কোটি টাকার মতো বাজেট অতিরিক্ত খরচ হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, করোনা আবহে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য জিডিপি-র ১০ শতাংশ খরচ হবে। বাস্তবে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য বাড়তি বরাদ্দ বা ‘ফিস্কাল স্টিমুলাস’-এর পরিমাণ জিডিপি-র ১ শতাংশের সামান্য বেশি। ২০ লক্ষ কোটি টাকার সিংহ ভাগই আসছে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের নগদ জোগান বা ব্যাঙ্কের ঋণ থেকে। গরিব মানুষের হাতে টাকা তুলে দিতে সরকার নিজের কোষাগার থেকে বিশেষ অর্থ ঢালছে না।
৫ দিন ধরে ধাপে ধাপে আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণার পরে অবশেষে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ২০ লক্ষ কোটি টাকার হিসেব-নিকেশ দিয়েছেন। তাঁর হিসেবে, মোট প্যাকেজের পরিমাণ ২০ লক্ষ ৯৭ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। বিজেপি নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী বিশ লক্ষ বলেছিলেন, অর্থমন্ত্রী আর্থিক প্যাকেজকে প্রায় ২১ লক্ষ কোটি টাকায় নিয়ে গেলেন।
কিন্তু এর মধ্যে সরকারি খরচ কতখানি? অর্থমন্ত্রীর জবাব, ‘টাকা কোথা থেকে যাচ্ছে, তার থেকে কোথায় খরচ হচ্ছে, সেখানে নজর দেওয়া বেশি জরুরি।’ তবে নির্মলা না বললেও অর্থ মন্ত্রক সূত্র ও আর্থিক বিশ্লেষকদের হিসেব অনুযায়ী, ২০ লক্ষ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজে সরকারি কোষাগার থেকে বাড়তি খরচ হবে মাত্র ২ লক্ষ ১৭ হাজার ৯৫ কোটি টাকা। জিডিপি-র মাত্র ১.১ শতাংশ।
ছোট-মাঝারি শিল্পকে ঋণ দিতে ৩ লক্ষ কোটি টাকার তহবিল, চাষিদের ঋণ দিতে ২ লক্ষ ৭০ হাজার কোটি টাকা, হকারদের ঋণ দিতে ৫ হাজার কোটি টাকা, কৃষি পরিকাঠামোয় ১ লক্ষ কোটি বা রিজার্ভ ব্যাঙ্কে ৮ লক্ষ কোটি টাকার বেশি নগদ জোগানে কেন্দ্রের এক নয়া পয়সাও অবদান নেই।
তা হলে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বিশ লাখি ‘ফিস্কাল স্টিমুলাস’ দেখানোর কী দরকারটা ছিল, বিরোধীরা সেই প্রশ্ন তুলছেন। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম বলেন, ‘রাজকোষ থেকে বাজেটের অতিরিক্ত খরচ হলে তবেই সেটাকে ফিস্কাল স্টিমুলাস বলা চলে।’
অর্থ মন্ত্রক চলতি অর্থ বছরে বাড়তি ৪.২ লক্ষ কোটি টাকা ঋণের ঘোষণা করেছে। নির্মলা জানিয়েছেন, বাড়তি খরচের জোগান সেখান থেকেই আসবে। চিদম্বরমের মতে, অর্থমন্ত্রী নিজেই স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ২০ লক্ষ কোটি টাকার ঘোষণা করলেও সরকারি খরচ ওই ৪.২ লক্ষ কোটি টাকার বেশি হতে পারে না।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো অনেকেই বলেছিলেন, সরকার মানুষের হাতে কিছু টাকা তুলে দিক। তাতে বাজারে চাহিদা বাড়বে। গরিব মানুষের সরকার কেন ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা সরাসরি তুলে দিল না? নির্মলার জবাব, ‘আমরা সব পরামর্শই খতিয়ে দেখেছি। আমাদের ধারণা, আমাদের সমাধানেরও প্রভাব পড়বে।’
শিল্পপতি কিরণ মজুমদার শ’-এর প্রশ্ন, ‘প্যাকেজ নিয়ে আমি হতাশ। এতে বাজারে চাহিদা বাড়বে না।’ ইওয়াই ইন্ডিয়ার মুখ্য উপদেষ্টা ডি কে শ্রীবাস্তবের মতে, প্যাকেজের মাত্র ১০ শতাংশই সরকারি খরচ। প্রায় ৫ শতাংশ আগেই বাজেটে ধরা ছিল। বাকিটা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্কের ঋণ থেকে আসছে। বার্কলেজ় রিসার্চের মতে, এই আর্থিক প্যাকেজের মধ্যে মাত্র ১.৫ লক্ষ কোটি টাকা সরকারের ঘর থেকে খরচ হবে।