মঙ্গলবার আধঘণ্টার সামান্য বেশি সময় জাতির উদ্দেশ্যে যে ভাষণ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, তার মধ্যে ২৮ বার ‘আত্মনির্ভর’ শব্দটি উচ্চারণের পাশাপাশি কাজের কাজ বলতে মহামারি বিধ্বস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ২০ লক্ষ কোটির প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন তিনি। এবং আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের পণ্যের অভ্যাস ছেড়ে স্রেফ দেশজ জিনিস ব্যবহারের ডাক দিয়েছেন। এই দ্বিতীয় বিষয়টি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল পড়ে গেছে। কারণ একদা ‘চা-ওয়ালা’ প্রধানমন্ত্রীর ব্র্যান্ডেড পোশাক, ঘড়ি, রোদচশমার ওপর বিশেষ দুর্বলতা সর্বজনবিদিত।
দেশকে স্বনির্ভর করতে ‘লোকাল’ নিয়ে ‘ভোকাল’ হওয়ার আবেদনে উত্তর কোরিয়ার স্বৈরতন্ত্রী শাসক কিম জং উনের মিল খুঁজে পেয়েছে তৃণমূল। প্রধানমন্ত্রীকে মস্করা করে দলের এক সাংসদের টুইট, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথা শুনছি। খুব মিল খুঁজে পাচ্ছি উত্তর কোরিয়ায় কিম জংয়ের সঙ্গে।’ সেই সাংসদ এ কথাও বলেন যে, ‘কিমের একটি মূল আদর্শ হল জুচ। এতে উত্তর কোরিয়াকে বিশ্বের মধ্যে আলাদা থাকতে হবে। স্বতন্ত্র অস্তিত্ব তৈরি করতে হবে নিজ শক্তিবলে ও একজন ঈশ্বরতুল্য নেতার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে।’
প্রধানমন্ত্রীর স্বনির্ভরতার এই মন্ত্রে মজছেন না প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিব কে সুজাতা রাও। তাঁর টুইট, ‘ভারত যে মানবিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে, তাই নিয়ে কিছু বললে পারতেন। গরিব মানুষ বিপন্ন। তাঁদের সহমর্মিতার প্রয়োজন ছিল। মানবিক হওয়ার দরকার ছিল।’ টুইটার ছেয়ে গেছে তির্যক সব টুইটেও। যেমন জনৈক এম কে বেণুর টিপ্পনী, ‘একজন ব্যক্তি আছেন, যিনি মেব্যাকের রোদচশমা, মোভ্যাকের ঘড়ি পরেন। মব্লাঁ পেনে লেখেন। বিএমডব্লিউ গাড়ি চড়েন। তিনিই আমাকে দেশি জিনিস কিনতে বলছেন। সময়ের সঙ্গে আত্মনির্ভরতার অর্থ বদলায়!’
আরেকজন লিখেছেন, ‘গত রাতে স্বগতোক্তির পর জানলাম, মেড ইন ইন্ডিয়ার নতুন মানে লোকাল, দেশি ব্যবসার পৃষ্ঠপোষকতা করা মানে ভোকাল, স্বয়ংসেবকের অর্থই এখন আত্মনির্ভর। ২০ লক্ষ কোটিতে ১৩টি শূন্য হয়। এবং মোদীর এখনও কোনও রকম পরিকল্পনাই নেই!’ নেহা চৌহান নামের একজন আবার লিখেছেন, ‘ঠিক আছে, আমরা না হয় সব মেড ইন ইন্ডিয়া পণ্যই ব্যবহার করব। কিন্তু বলুন তো, এগুলোর মধ্যে কোনটা ভারতে তৈরি, টুইটার, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম? আপনার ইলেকট্রনিক ফোন, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট? নাকি ওই ক্যামেরাটা যেটা আপনার মন কি বাত রেকর্ড করে?’