মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কড়া নির্দেশ, এ রাজ্যে কাজ করতে আসা শ্রমিকরা যাতে নিরাপদে ফিরতে পারেন, এবং ভিনরাজ্যে কাজ করতে যাওয়া বাংলার শ্রমিকরাও বাড়ি ফিরে আসতে পারেন, সেই ব্যবস্থা করতে হবে। শাসকদলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের প্রতিই এই একই বার্তা তৃণমূল নেত্রীর। মন্ত্রীরাও এবার সেই কাজে নামলেন। রবিবার হাওড়া নিবড়ার কাছে বম্বে রোড অর্থাৎ ৬ নং জাতীয় সড়ক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন ৫৪ জন শ্রমিক। সেই খবর কানে পৌঁছতেই সমবায় মন্ত্রী তথা মধ্য হাওড়ার বিধায়ক অরূপ রায় তাঁদের বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছে দিয়েছেন। শুনেছেন পরিযায়ী শ্রমিকদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও।
হায়দ্রাবাদে নির্মাণ কাজের জন্য গিয়েছিলেন মালদা-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার মানুষজন। সেখানে পরিবার নিয়ে ছিলেন তাঁরা। লকডাউনের পর ধীরে ধীরে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আর তারপরই তাঁদের জীবনে ঘনিয়ে আসে অন্ধকার। বাড়ি ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠেন তাঁরা। রবিবার সমবায় মন্ত্রীর সাহায্য পেয়ে তাঁর কাছেই সেসব দিনের কথা খুলে বলেছে এই শ্রমিকের দল। তাঁরা জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে বাড়ি ফেরার জন্য সাহায্য চাইতে গিয়ে জুটেছে মার। সাহায্য না করে ফিরিয়ে দিয়েছেন আরও অনেকেই। এরপর তাঁরা নিজেরা হাঁটার পথ বেছে নিয়েছেন।
হাঁটতে হাঁটতেই হায়দ্রাবাদ থেকে অন্ধ্র-তেলেঙ্গানার সীমানায় পৌঁছেছেন। সেখানকার পুলিশ অবশ্য কিছুটা সদয় হয়ে তাঁদের বাসের ব্যবস্থা করেন। যদিও তার জন্য প্রচুর খরচ হয়ে যায়। সকলে মিলে ৪০ হাজার টাকা দিয়ে বাসে করে বাংলার সীমানায় প্রবেশ করেন। কিন্তু তারপর আর বাস তাঁদের নিয়ে এগোতে চায়নি, খড়গপুরের কাছে নামিয়ে দেয়। ফলে ফের শুরু হয় পথচলা। বম্বে রোড বা ৬ নং জাতীয় সড়কের উপর দিয়ে হেঁটেই হাওড়া পৌঁছনোর চেষ্টা করছিলেন। এরপরই ডোমজুড়ের কাছে রাস্তায় টহলরত ট্রাফিক পুলিশের মাধ্যমে এই খবর পৌঁছে যায় মন্ত্রী অরূপ রায়ের কাছে।
খবর পেয়েই তড়িঘড়ি তাঁদের রাস্তা থেকে সরিয়ে পাশের প্রতীক্ষালয়ে বসান মন্ত্রী। জল, বিস্কুট, কেক পাঠিয়ে প্রথমে খাবারের ব্যবস্থা করেন, বিশ্রামের ব্যবস্থা করেন। এরপর স্বাস্থ্যবিধি মেনে ৫৪ জনের জন্য দুটি বাসের ব্যবস্থা করে তাঁদের উত্তরবঙ্গে পাঠান। পাশাপাশি, সেখানকার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকেও এ বিষয়ে জানিয়েছেন অরূপ রায়। খোদ রাজ্যের একজন মন্ত্রীর তরফে এ হেন সাহায্য পেয়ে আনন্দে ও কৃতজ্ঞতায় অশ্রুসজল হয়ে ওঠেন ওই শ্রমিকরা। তাঁরা বলছেন, ভাগ্যিস এভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন মন্ত্রী, নইলে শেষ পর্যন্ত ঘরে ফেরা নিয়ে তাঁদের ঘোর সংশয় ছিল।