করোনা ভাইরাস সংক্রমণ রোধ করতে গত ২৫ মার্চ থেকে দেশজুড়ে চলছে একটানা লকডাউন। আর এর জেরেই আটকে পড়েছিলেন তাঁরা। অবশেষে গাঁটের কড়ি খরচ করে কেরালা বাড়ি ফিরতে পারলেন বাংলার শ্রমিকরা। জানা গিয়েছে, কেরালা থেকে ট্রেনে ওঠার আগে ৯১০ টাকা দিয়ে টিকিট কাটতে হয় তাঁদের। কারণ রেল রক্ষীরা পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, টিকিট না থাকলে ওঠা যাবে না। তবে আড়াই দিনের ট্রেন যাত্রার পর বুধবার রাতে যখন ‘বিশেষ’ ট্রেন বহরমপুর স্টেশনে পৌঁছয়, তখন শ্রমিকরা দেখলেন, তাঁদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় তাঁদের জন্য কী ব্যবস্থা করে রেখেছেন। প্রথমত, বাড়ি যাওয়ার জন্য বিনামূল্যে বাস। ছিল রাতের খাবার, ওষুধ— সবকিছুই। কেন্দ্র আর রাজ্যের এমন ফারাক দেখেই হাবিবুর, আব্বাসরা বলে উঠলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী সত্যি আমাদের নিজের দিদি।’
উল্লেখ্য, কেরালার এর্নাকুলাম থেকে ১১২৩ জন শ্রমিক নিয়ে বিশেষ ট্রেন রওনা দেয়। শ্রমিকের মধ্যে ১০৪৫ জনই মুর্শিদাবাদের। ৬১ জন নদিয়ার। বাকিরা বিভিন্ন জেলার। দীর্ঘ লকডাউনে আটকে থাকা শ্রমিকরা বাড়ি ফিরতে পারলেও ট্রেন যাত্রা সুখের ছিল না। জলঙ্গির দয়ারামপুরের হাবিবুর, ডোমকলের মইনুলরা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘বেশি টাকা দিয়ে আমাদের ট্রেনের টিকিট কাটতে হয়েছে। অথচ আমাদের বলেছিল, রেল ভাড়া নেবে না। সাধারণ সময়ে ৪১০ টাকা দিয়ে সাধারণ কামরায় যাই। সংরক্ষিত কামরায় গেলে ৮০০ টাকা লাগে। কিন্তু স্পেশ্যাল ট্রেনে তো বেশি টাকা নিল। আড়াই দিনে রেল মাত্র একবার খাবার দেয়, তাও ভাল না। জল দেয়নি। জল কিনে খেতে হয়েছে।’ আর বহরমপুরে নেমে কী দেখলেন?
উত্তরে তাঁরা বলেন, ‘আমাদের জন্য ডিএম, এসপিরা দাঁড়িয়ে ছিলেন। স্টেশনের বাইরে বাস। সঙ্গে রাতের খাবারও দিল। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য এসব হয়েছে। দিদি আমাদের কথা ভাবেন।’ কেরালা ফেরত শ্রমিকদের জন্য জেলা প্রশাসন সকাল থেকেই তৈরি ছিল। স্টেশনেই ১০টি মেডিক্যাল টিম সবাইকে পরীক্ষা করে। ৪০টি বেসরকারি, ২৫টি সরকারি, ৬৫টি বাস রাখা ছিল স্টেশনের বাইরে। কোন ব্লকে কোন বাস যাবে তাও লেখা ছিল। বাসে ওঠার আগে খাবারের প্যাকেটও দেয় জেলা পরিষদ। জেলাশাসক জগদীশ প্রসাদ মিনা ও পুলিশ সুপার কে শবরী রাজকুমার বলেন, ‘সব শ্রমিককে শারীরিকভাবে পরীক্ষার পর বাসে করে গ্রামের বাড়িতে আমরা পৌঁছে দিয়েছি। সঙ্গে ওষুধ, মাস্ক দেওয়া হয়েছে। বলে দেওয়া হয়েছে ১৪ দিন বাড়িতেই থাকতে হবে।’