কথায় আছে, একা রামে রক্ষে নেই, সুগ্রীব দোসর। ঠিক একই হাল এখন বিশ্ব অর্থনীতির। একে তো মন্দার কোপে ভুগছিল বাজার, এবার গোদের ওপর বিষফোঁড়ার মত তার সঙ্গে যোগ হয়েছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। আর এই জোড়া ফলায় কার্যত বিপর্যস্ত গোটা বিশ্বের অর্থনীতি। তবে করোনা-পরবর্তী বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতৃত্বে উঠে আসার ক্ষমতা আছে ভারতের। তার শিল্প উৎপাদন, তার বিবিধ পণ্য জোগান দেওয়ার সামর্থ্য আন্তর্জাতিক বাজারে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। এবার এমনই আশার কথা শোনালেন, ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর তথা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ রঘুরাম রাজন।
চলতি করোনা পরিস্থিতি এবং তার পরবর্তী পৃথিবী নিয়ে বিশ্বের বিশিষ্ট চিন্তাবিদদের সঙ্গে আলোচনার জন্য রাহুল গান্ধী যে ভিডিও কনফারেন্সের উদ্যোগ নিয়েছেন, তার প্রথম পর্বের বক্তা ছিলেন রাজন। সেখানেই তিনি বলেন, বিশ্ব অর্থনীতিতে এখন বিবাদমান যে দুই দেশ, আমেরিকা এবং চীন, ভারত তাদের কারও পক্ষে নয়। ভারত এক তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তি, যা বিশ্বের বৃহত্তম না হয়েও স্রেফ নিজের বিপুলায়তন বাজারের জোরে নিজের আওয়াজ প্রবলতর করতে পারে।
এই ভিডিও বৈঠকে রাজনের আরও একটি বক্তব্য রাজনীতিক থেকে সাধারণ মানুষ, সবারই নজর কেড়েছে। তিনি বলেছেন, চলতি লকডাউনে দেশের গরিব মানুষকে দু’বেলা খাওয়াতে সরকারের ৬৫ হাজার কোটি টাকা খরচ হত। যে দেশের গড় জাতীয় উৎপাদনের পরিমাণ ২০০ লক্ষ কোটি টাকা, সেই দেশের পক্ষে সহজেই এটা দেওয়া সম্ভব। একই সঙ্গে অবশ্য বাস্তবতাকেও স্বীকার করেছেন রাজন যে, খুব বেশি দিন এভাবে মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব নয়। তাই ধীরে ধীরে পরিকল্পিতভাবে লকডাউন তুলতে হবে। সংক্রমণ পরীক্ষার হার বাড়ানোর কথা বলেও তাই তিনি বলেছেন, ১০০ শতাংশ পরীক্ষা করা সম্ভব নয়।
এই প্রসঙ্গে রাহুল গান্ধীর প্রশ্ন ছিল, আমেরিকা বা ইওরোপীয় দেশগুলি যে ব্যাপক হারে পরীক্ষা করছে, ভারতের মতো বড় দেশে সেরকমটা করার ক্ষমতা কি রয়েছে? রাজন বলেন, যদি দিনে ২০ লক্ষ মানুষের পরীক্ষা করা যায়, তা হলে আমেরিকার মতো নিশ্চয়তা আসতে পারে। ভারতের পক্ষে তার ধারেকাছে যাওয়া সম্ভব নয়। এখানে বড়জোর দিনে ২৫ থেকে ৩০ হাজার পরীক্ষা হতে পারে। করোনা-পরবর্তী বিশ্বের অর্থনীতিতে ভারতের ভূমিকার প্রশ্নে আমেরিকা-চীন দ্বিমুখী অর্থনীতির পরিবর্তে বহুমুখী এক আন্তর্জাতিক অর্থনীতির কথা জোর দিয়ে বলেছেন তিনি।
আসলে দুটি বা তিনটি বড় অর্থনৈতিক শক্তি নয়, বরং একাধিক দেশ বিশ্ব অর্থনীতির শরিক হবে, এবং সেই নিয়ে দেশগুলির মধ্যে আলোচনা শুরু করতে ভারতই অগ্রণী ভূমিকা নিতে পারে বলে রাজন মনে করছেন। সেই প্রেক্ষিতে রাহুলের প্রশ্ন ছিল, তা হলে করোনা-পরবর্তী পরিস্থিতির সুযোগ কি ভারত নিতে পারে? রাজনের সোজাসাপটা বক্তব্য, এরকম ধরনের খারাপ পরিস্থিতির থেকে ভাল সুযোগ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা কম। সেরকমটা হয় না। কিন্তু বিশ্ব অর্থনীতিকে অবশ্যই ভাবতে হবে দুই বৃহৎ শক্তির টানাপোড়েনের মধ্যে আটকে না থেকে এক বহুমুখী বহুদেশীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থার কথা।