কেন্দ্রীয় দল যতই অভিযোগ করুক না কেন, সমীক্ষার ফলেই দেখা গিয়েছিল দেশের মধ্যে সব থেকে ভাল লকডাউন চলছে কলকাতায়। আর কলকাতার এই সফলতার পিছনে যে খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশ দৃঢ় ভূমিকা রয়েছে তাও স্বীকার করা হয়েছিল ওই রিপোর্টে। যার ফলে মুখ পুড়েছিল কেন্দ্রের। এবার সামনে এল আরও এক তথ্য। দেশের মধ্যে লকডাউন চলাকালীন সময়ে বেশ ভালই আছে গ্রামবাংলা। ১০০ দিনের কাজ আর সবজি বিক্রির ব্যবস্থা- এই দুইয়ের মেলবন্ধন ঘটিয়ে গ্রামকে ঠিক রেখেছেন মমতা।
প্রসঙ্গত, লকডাউনের বাংলায় একটা বড় চিন্তা ছিল কেমন থাকবে বাংলার গ্রামের মানুষেরা। এই চিন্তা ছিল মুখ্যমন্ত্রীরও। তাই বেশ সুচিন্তিত পদক্ষেপে লকডাউনের মাঝেই তিনি গ্রামবাংলার অর্থনীতির চাকাকে ঘুরিয়ে চলেছেন। তাকে থেমে যেতে দেননি। একদিকে যেমন কৃষিকাজকে বজায় রাখার বার্তা দিয়েছেন তেমনি কাজ হারানো ভূমিহীন মানুষগুলোকে দিচ্ছেন ১০০ দিন প্রকল্পের কাজ। তার জেরেই সচল থেকেছে গ্রামবাংলার অর্থনীতি।
অনেকেই হয়তো জানেন না দেশের মধ্যে এখন সব থেকে বেশি সবজি চাষ হয় যেসব রাজ্যে তার মধ্যে প্রথমদিকেই আছে বাংলার নাম। ধান আর গম চাষের ক্ষেত্রেও বাংলা বেশ ওপরের দিকে উঠে গিয়েছে। দেশের নানাপ্রান্তে এই লকডাউনের মধ্যেও বাংলার সবজি, চাল, গম ট্রেনে বা লরিতে চড়ে পাড়ি জমাচ্ছে দেশের আনাচেকানাচে। সেই সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যজুড়ে সবজির যোগানে যাতে কোনও খামতি না থাকে তার ব্যবস্থাও করে দিচ্ছেন।
গত একমাসে এই রাজ্যের কোথাও এমন কোনও অভিযোগ ওঠেনি যে কেউ না খেয়ে পড়ে রয়েছেন বা না খেতে পেয়ে মারা গিয়েছেন। রেশনে বিনামূল্যের চাল-চিনি-গম আর সবজি বিক্রির সুবিধা। সঙ্গে স্কুলপড়ুয়াদের জন্য মিড ডে মিল। আর আছে নানাজনের নানারকমের ভাতা। এই সব লকডাউন চালুর মুখেই শুরু করে দিয়েছেন বাংলার সর্বজনীন ‘দিদি’। চাষীরা এই লকডাউনের মধ্যেও কিন্তু তাঁদের সবজি বিক্রি করে আয়ের মুখ দেখছেন।
আবার নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম, মালদা ও উত্তর দিনাজপুর জেলার বহু মানুষের নিজস্ব জমি নেই। বছরের বেশির ভাগ সময় তাঁরা ভিন্ন রাজ্যে পড়ে থাকেন কাজের সূত্রে। তাই মুখ্যমন্ত্রী সুচিন্তিত ভাবে এইসব জেলায় ১০০ দিনের প্রকল্পের কাজ চালু করে দিয়েছেন লকডাউনের প্রথম ধাপেই। সঙ্গে থাকছে বিনামূল্যের রেশনও। এই প্রকল্পের মাধ্যমে পুকুর কাটা, রাস্তা নির্মাণ, নার্সারির কাজে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কাজে লাগানো হচ্ছে গ্রামের মানুষদের যাদের কাজ প্রয়োজন। মাস্টাররোল অনুযায়ী তাঁদের মজুরি চলে যাবে তাঁদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।
সুন্দরবন হোক কী পুরুলিয়া, কোচবিহার হোক কী কাটোয়া, ঝাড়গ্রাম হোক কী গাইঘাটা সব জায়গায় নীরবেই চলছে ১০০দিনের কাজের প্রকল্প। সেই সঙ্গে জোর দেওয়া হচ্ছে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজের ওপরেও। সব মিলিয়ে এই লকডাউনের বাজারে দেশের অনান্য রাজ্যে যখন নাভিশ্বাস উঠেছে তখন কিন্তু অনেকটাই ভাল আছে মমতার বাংলা।