করোনার জেরে পরিস্থিতি বিগড়ানোর আগে মুর্শিদাবাদের জঙ্গিপুরে দিদির বাড়ি গিয়েছিলেন উত্তরপাড়ার সুস্মিতা বাগ। লকডাউনে আটকে যাওয়ার এক মাস পর বারাসাত হয়ে ট্রাফিক পুলিশের সাহায্যে উত্তরপাড়ার মাখলার ভাড়াবাড়িতে ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন পাঁচ দিন আগে। কিন্তু পাড়ার লোক তাদের ঘরে ঢুকতে দেননি৷
বাড়িওয়ালা সুস্মিতাকে ঘরে ঢুকতে দিতে রাজি হলেও এলাকার মানুষ তাঁকে ঘরে ঢুকতে বাধা দেয়। অভিযোগ, দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় বাইরে থাকার পর তিনি যখন ঘরে ঢুকতে যান এলাকারই কিছু ছেলে তাঁর দিকে রীতিমতো মারমুখী হয়ে তেড়ে যায়। এখন ছয় বছরের ছেলেকে নিয়ে রাস্তায় ঘুরে দিন কাটাচ্ছেন এই মহিলা।
সুস্মিতা জানান, তিনি গত ছয় বছর ধরে উত্তরপাড়া মাখলায় ভাড়া বাড়িতে থাকেন। এখানে তার স্বামী একটা রুটির দোকানে কাজ করেন। তিনি নিজে একটি আয়া সেন্টারে কাজ করেন। লকডাউনের আগে স্বামী ধনেখালির বাড়িতে চলে যান। তিনি জঙ্গিপুরে এক দিদির বাড়ি যান। ফিরে বালিতে থার্মাল স্ক্রিনিংয়ের পর উত্তরপাড়ায় ঢোকেন। সেদিন উত্তরপাড়া স্টেট জেনারেল হাসপাতালে তাঁর, ছেলের ও পিসতুতো ভাইয়ের শারীরিক পরীক্ষা করান। তারপর হাসপাতাল থেকে তিনজনের ফিট সার্টিফিকেট নিয়ে এলেও, চরম অমানবিকতার শিকার এই মহিলা ও তার ছেলে।
লকডাউনের কারণে তাঁর স্বামীও ছেলে ও স্ত্রীকে নিতে ধনেখালি থেকে আসতে পারেননি। সুস্মিতা জানান, তার হাতে যেটুকু পয়সা ছিল তাও ফুরিয়ে গিয়েছে। নিজে না খেয়ে থাকলেও ছেলেটাকে কি খেতে দেব এ নিয়ে ভেবে কোনো কূল কিনারা পাচ্ছেন না। তাঁর বিনীত আবেদন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হস্তক্ষেপ করে তাঁর ঘরে ঢোকার ব্যবস্থা করে দিন। না হলে রাস্তাতেই না খেতে পেয়ে তাঁকে আর ছেলেকে মরতে হবে।”
চরম অমানবিক ঘটনার প্রতিবাদ করে এলাকার কেউই সুস্মিতার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেননি। উত্তরপাড়া রেল ষ্টেশনের টিকিট কাউন্টারে এক রাতও কাটান তিনি। পরে রেল পুলিশের তাড়া খেয়ে এখন রাস্তাই ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে সুস্মিতার। কিন্তু কতদিন এভাবে চলবে তা নিজেই জানেন না তিনি।