লকডাউনে খেতে না পেয়ে মরতে হল দিল্লীবাসী বিহারের এক শ্রমিককে। আত্মহননের পথ বেছে নিলেন দিল্লীর সরস্বতীকুঞ্জের বাসিন্দা ছাবু মণ্ডল। বয়স ৩৫।
বাবা–মা, স্ত্রী এবং চার সন্তান সহ বাড়িতে মোট আটটি মাথা। কারোরই খাবার জুটছে না। ঘরে একদানা চালও নেই। শেষবার নিজের ফোন বেচে সামান্য খাবার কিনে এনেছিলেন ছাবু। দিল্লীর গুঁরগাওয়ে বাড়িতে বাড়িতে ছবি আঁকার কাজ করতেন তিনি। কাজের জন্যে এদিক সেদিকও যেতে হত। লকডাউনের জেরে একবার আটকেও পড়েছিলেন। ভাত জুটছে না, তাতে কী! স্বামী কোনওমতে বাড়ি ফিরে এসেছেন, তাতেই বেশ খুশি হয়েছিলেন স্ত্রী পুণম। ছাবু বাড়ি ফেরার আগে থেকেই ভাত জুটছিল না। প্রতিবেশির বাড়িতে গিয়ে হাত পাততে হত প্রত্যেকদিন। নয়ত এলাকায় কেউ খাবার দিতে এলে অল্প হলেও খেতে পেত ছাবু–পুণমের পাঁচ বছরের ছোট্ট শিশুটা। গুঁরগাওতে একটি ছোট্ট কুঁড়েঘরে বাস ওই আটজনের। লকডাউনে বেশকয়েক দিন ধরেই কাজ নেই ছাবুর। ঘরে এক পয়সাও নেই। আর সহ্য করতে পারেননি। বাড়িতে কেউ নেই দেখে গলায় দড়ি দেন তিনি।
কাঁদতে কাঁদতে স্ত্রী পুণম বলছেন, ‘স্বামী ছিল। ভরসা ছিল। এখন তো আরোই ভাত জুটবে না।’ সরস্বতীকুঞ্জের আরও এক বাসিন্দা, ফিরোজ। ছাবুর সঙ্গেই কাজ করেছেন বিভিন্ন জায়গায়। তিনি বলছেন, লকডাউন নয়, তার আগে থেকেই কাজ পাচ্ছিলেন না ছাবু। টুকিটাকি যা কাজ আসছিল, সেখান থেকে রোজগার খুব সামান্যই হত। তা দিয়ে কি আর সংসার চলে! তার ওপর লকডাউন। পুণম বলছেন, ‘বাড়ি ভাড়াও দিতে পারছিলাম না আমরা। বাড়িওয়ালা বারবার তাগাদা দিচ্ছিলেন। কিন্তু দেব কোত্থেকে! ফোন বেচে হাতে এসেছিল ২৫০০ টাকা। সেই টাকায় কিছু খাবার কেনা হয়েছিল। বাকি টাকা দিয়ে একটা পোর্টেবল ফ্যান কেনা হয়েছিল। কুঁড়েঘরে থাকি। টিনের চাল। বাচ্চাগুলো ঘুমতে পারে না। গরমে কষ্ট হয়। বাধ্য হয়েই ফ্যান কিনতে হয়েছিল।’ ছাবুর শেষকৃত্যও হয়েছে প্রতিবেশিদের টাকায়। প্রত্যেকেই একটু একটু করে টাকা দেওয়ায় হাজার পাঁচেক টাকা চাঁদা তোলা হয়েছিল। সেই টাকা দিয়ে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে। জানিয়েছেন পুণম।
পুলিশ বলছে, ছাবু মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। লকডাউনের সময়ে রোজগার নেই। পরিবার–সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতে না পেরে বেশ চিন্তায় ছিলেন তিনি। তাই আত্মহত্যা করেছেন।