করোনা মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে গোটা দেশজুড়ে ২১ জুড়ে লকডাউনের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজ্যের পরামর্শ মতো সেই লকডাউনের মেয়াদ আগামী ৩ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছেন তিনি। ফলে স্তব্ধ জনজীবন। ঘুরছে না অর্থনীতির চাকাও। আর এতেই দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। অর্থনীতির এই থমকে যাওয়া, দেশের বিরাট সংখ্যক মানুষকে দারিদ্র আর অনাহারের পথে ঠেলে দেবে না তো? করোনার মতো অতিমারির ক্ষত সামলে ওঠার আগে মুখ থুবড়ে পড়বে না তো অর্থনীতি? এমন জোড়া সঙ্কটের মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ করা উচিত সরকারের? দুই নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন পরামর্শ দিচ্ছেন, করোনার মতো বিপুল চাপ কাটাতে বুদ্ধিমানের মতো খরচ করা উচিত সরকারের। তবে এ-ও বলছেন, যাঁদের সত্যিই প্রয়োজন তাঁদের ক্ষেত্রে খরচে যেন কার্পণ্য না করা হয়।
করোনার আগে থেকেই ধুঁকছিল ভারতের অর্থনীতি। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সমীক্ষায় দেশের জিডিপি-র হার পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল। এমন সময়ে করোনার মতো অতিমারির হানা যেন গোদের ওপর বিষফোড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতি থেকে উঠে আসার জন্য কী করণীয়, তা নিয়ে এক বেসরকারি সংবাদপত্রে বিস্তারিত লিখেছেন দুই নোবেল জয়ী অথর্নীতিবিদ অর্মত্য সেন, অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও আরবিআইয়ের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। সঙ্কটমোচনে সরকারকে একাধিক দাওয়াইও দিয়েছেন তিন জন। তাঁরা লিখেছেন, সংক্রমণ রোখার জন্য দেশে সম্পূর্ণ অথবা আংশিক ভাবে লকডাউন চলবে। কিন্তু এই সময়ে দেশের বিরাট অংশের মানুষ যেন দারিদ্র বা অনাহারের কবলে না পড়ে, তাঁদের ন্যূনতম চাহিদা যাতে পূরণ হয় সে ব্যাপারে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
সমাজের নিচুতলায় বাস করা মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর সামর্থ্য যে সরকারের আছে সে কথাও স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ওই অর্থনীতিবিদদের মতে, দেশের মজুত করা খাদ্য ভাণ্ডার কম নয়। অর্থনীতিবিদরা দাবি করেছেন, ২০২০ সালের মার্চের মধ্যে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)-এর মজুত করা খাদ্যশস্যের পরিমাণ ৭.৭ কোটি টন যা এই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এমনকি ওই খাদ্যশস্যের পরিমাণ বাফার স্টক (প্রতি তিন মাস অন্তর যে পরিমাণ খাদ্যশস্য মজুত রাখা হয়)-এরও তিন গুণ। এর উপর রবিশস্য মজুত হলে তার পরিমাণ আরও বাড়বে। দেশে এমন জরুরি পরিস্থিতিতে মজুত থাকা খাদ্যশস্য থেকে জন সাধারণকে বিলিয়ে দেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলে জানাচ্ছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে আগামী তিন মাসের জন্য প্রত্যেক ব্যক্তিকে মাসে পাঁচ কেজি করে খাদ্যশস্য গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরুও হয়েছে।
তবে সরকারের রেশন বিলির প্রক্রিয়ার মধ্যেও ফাঁক রয়েছে, সে কথাও উল্লেখ করেছেন ওই অর্থনীতিবিদরা। তাঁরা লিখছেন, এর বাইরেও বহু মানুষ রয়ে গিয়েছেন। কারণ, যাঁদের কার্ড রয়েছে তাঁরাই রেশন পাচ্ছেন। অথচ এর বাইরেই বহু মানুষ রয়েছেন। ওই সব মানুষের হাতে দ্রুত রেশন কার্ড তুলে দেওয়ার পক্ষেও সওয়াল করেছেন তাঁরা। শুধু রেশন বিলিই নয়, ভিন রাজ্যে আটকে পড়া পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ক্যান্টিন চালানোর পরামর্শও দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদরা। স্কুল পড়ুয়া শিশুদের বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছে দেওয়ার কথাও বলেছেন তাঁরা। এ ব্যাপারে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে কাজে লাগাতে হবে বলেও মত তাঁদের। অন্যদিকে, বহু মানুষের আয় যে এখন শূন্যে নেমে গিয়েছে, তা নিয়ে সরকারি ভূমিকার কিছুটা সমালোচনা করেছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, খুব কম সংখ্যক মানুষের হাতেই অর্থ পৌঁছে দিতে পেরেছে সরকার। আর তার অঙ্কও কম। শুধু কৃষক নয়, ভূমিহীন কৃষিশ্রমিকদের হাতেও কেন সরকারি অর্থ পৌঁছবে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন তাঁরা।