ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এখনও রাজ্য রাজ্য সরকারের হাতে তুলে দিতে পারেনি রেশনের খাদ্য সামগ্রী। এদিকে লক ডাউনের মধ্যে যাতে কেউ না খেয়ে মারা না যান তার জন্য রাজ্য সরকারের তরফে রেশন থেকে বিনামূল্যেই দেওয়া হয়েছে চাল ও গম। এবার তা নিয়েই কাজিয়ে বাঁধল রাজ্য ও কেন্দ্রের মধ্যে। তবে বিষয়টি এখন মিটমাট করার পথে নেমেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ান। সেই কারণে ভিডিও কনফারেন্সে তিনি বৈঠকও করেছেন রাজ্যের খাদ্যসচিব মনোজ আগরওয়ালের সঙ্গে।
রাজ্যে লক ডাউন শুরু হওয়ার পরে পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়ে দেন, রাজ্যের কোনও মানুষ যাতে এই সময়ে না খেতে পেয়ে মারা যান তার জন্য রেশন থেকে বিনামূল্যেই খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হবে। প্রয়োজন পড়লে ৬ মাসের জিনিস একবার একসঙ্গেই তুলে নেওয়া যাবে। রাজ্য সরকারের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ১ এপ্রিল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অন্ত্যোদয় অন্ন যোজনা প্রকল্পের অধীনে থাকা পরিবারগুলিকে বিনামূল্যে ১৫ কেজি করে চাল ও ২০ কেজি করে গম দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে মিলবে ১৩.৫০টাকা কেজি দরে ১কেজি চিনিও। আবার অগ্রাধিকার প্রাপ্ত পরিবার ও বিশেষ পরিবারগুলি বিনামূল্যে মাথাপিছু পাবে ২ কেজি করে চাল ও ৩ কেজি করে গম। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-১ কার্ডধারীরা কার্ড পিছু বিনামূল্যে ২ কেজি করে চাল ও ৩ কেজি করে গম। রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনা-২ কার্ডধারীরা কার্ড পিছু পাবেন ১৩টাকা কেজি দরে ১ কেজি চাল ও ৯টাকা কেজি দরে ১ কেজি গম। বিশেষ উপজাতিরা বিনামূল্যে পাবেন মাথাপিছু ৮ কেজি করে চাল ও ৩ কেজি করে গম।
এর পাশাপাশি কেন্দ্রীয় সরকারও জানিয়েছিল ‘গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনা’ কর্মসূচিতে প্রতি মাসে মাথাপিছু ৫ কেজি চাল এবং পরিবার পিছু মাসে ১ কেজি করে ডালও দেওয়া হবে। কিন্তু বাংলায় এখনও পর্যন্ত রেশন দোকানে এই কর্মসূচি অনুযায়ী চাল ও ডাল দেওয়া হচ্ছিল না। তার জেরেই রাজ্যের বিজেপি নেতারা অভিযোগ তুলেছিলেন এই রাজ্যে ইচ্ছাকৃত ভাবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী পালন করছে না। তার জেরে মানুষ তাঁদের নায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেন্দ্র যে চাল পাঠাচ্ছে তা রাজ্য নিজের নামে রেশন থেকে বিলি করছে। সেই মর্মে রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছেও অভিযোগ যায়। সাউথ ব্লক সুত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য বিজেপি নেতাদের অভিযোগের সুত্রেই প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী রামবিলাস পাসোয়ানকে বলেন এই বিষয়টি নিয়ে বাংলার খাদ্যদফতরের সঙ্গে কথা বলতে।
সেই মর্মে সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সে কথা হয় রামবিলাস পাসোয়ানের সঙ্গে এ রাজ্যের খাদ্যসচিব মনোজ আগরওয়ালের। সেখানেই কার্যত হাটে হাঁড়ি ভেঙে সেন খাদ্যসচিব। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে তিনি সাফ জানিয়ে দেন, কেন্দ্রের কর্মসূচী পালনের জন্য কেন্দ্রকেই চাল-ডাল পাঠাতে হবে। ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া এখনও সেই চাল আর ডাল পাঠায়নি। স্বাভাবিক ভাবেই সামগ্রী না এলে রাজ্যের রেশন দোকান থেকে কীভাবে চাল আর ডাল দেওয়া হবে? আর রাজ্যের রেশন দোকান থেকে এখন যে চাল-গম-চিনি দেওয়া হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভাবেই রাজ্য সরকার নিজে বাজার থেকে কিনে তা মানুষকে দিচ্ছে। চাল কেন হয়েছে সরাসরি চাষীদের কাছ থেকে। তাই কেন্দ্র চাল আর ডাল না পাঠালে কেন্দ্রীয় কর্মসূচী রূপায়ন করাও যাবে না। খাদ্যদফতর সুত্রে জানা গিয়েছে এরপরেই কেন্দ্রীয় খাদ্যমন্ত্রী জানান, যে তিনি ফুড কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়াকে দ্রুত নির্দেশ দিচ্ছেন চাল আর ডাল পাঠাতে।