রাজ্য এবং রাজ্যপাল সঙ্ঘাত যেন কিছুতেই থামার নয়। বারবার রাজ্যের নানা সিদ্ধান্তে মুখ খুলে বিতর্কে জড়িয়েছেন জগদীপ ধনকর। এবার বেলপাহাড়ি হাসপাতালে আলো নিভিয়ে মোমবাতি জ্বালানোর ঘটনা নিয়ে টুইট করে ফের বিতর্কে জড়ালেন বাংলার রাজ্যপাল। শনিবার রাতে তিনি টুইট করে বলেন, ‘জাতির আহ্বানে সাড়া দিয়ে বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালে ৯ মিনিটের ব্ল্যাকআউট করে ৫ এপ্রিল প্রদীপ জ্বালানোর জন্য মেডিক্যাল অফিসারকে শোকজ দুর্ভাগ্যজনক! করোনার বিরুদ্ধে আমাদের সমবেত লড়াইয়ের ক্ষেত্রেও এটা বিস্ময়ের।’ ওই টুইটার পোস্টে ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের স্বাক্ষরিত একটি শোকজের নির্দেশও যুক্ত করেন রাজ্যপাল। রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধানের এই টুইট ঘিরে ইতিমধ্যেই উঠেছে প্রশ্ন। কারণ, রাজ্যপালের টুইট কার্যত কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎমন্ত্রকের নির্দেশকেই ‘অমান্য’ করছেন বলে অভিযোগ।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ৩ এপ্রিল জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়ে বলেন, ‘৫ এপ্রিল রবিবার রাত ন’টায় ৯ মিনিটের জন্য ঘরের সমস্ত আলো নিভিয়ে দেশবাসী মোমবাতি, প্রদীপ, মোবাইলের ফ্ল্যাশ লাইট জ্বালাবেন।’ এরপর সোশ্যাল মিডিয়ায় দেশজুড়ে ৯ মিনিটের আলো নেভানো নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। শেষ পর্যন্ত ৪ এপ্রিল বিকেলে ভারত সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রকের তরফে এক প্রেস বিবৃতি দিয়ে সুনির্দিষ্ট ভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় কোন কোন ক্ষেত্রগুলিকে ৯ মিনিটের আলো নেভানোর আওতা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। সেখানে জরুরি পরিষেবার মধ্যে হাসপাতালকে ‘বাদ’ দেওয়ার কথা ঘোষণা করে নির্দেশিকা জারি হয়। কিন্তু ৫ এপ্রিল রাত ৯টায় ঝাড়গ্রাম জেলার বেলপাহাড়ি গ্রামীণ হাসপাতালের ভিতর এবং বাইরে সমস্ত বৈদ্যুতিক আলো বন্ধ করে প্রদীপ ও মোমবাতি জ্বালানো হয়। সে সময় হাসপাতালে মোট ৩২ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এমনকী সদ্যোজাত ও প্রসূতিরাও ছিলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে হাসপাতালের আলো বন্ধ করে প্রদীপ জ্বালানোর ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। এরপর ঝাড়গ্রাম জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা গত ৭ তারিখ বিএমওএইচ, দুই মেডিক্যাল অফিসার, একজন নার্স এবং একজন স্টাফকে শোকজ করেন। গত ১০ তারিখ হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার তীর্থপ্রসাদ চক্রবর্তীকেও শোকজ করা হয়। এরই প্রেক্ষিতে রাজ্যপালের টুইটের পর শুরু হয় বিতর্ক। ঝাড়গ্রাম জেলা কংগ্রেসের সভাপতি সুব্রত ভট্টাচার্য বলেন, ‘রাজ্যপালের উচিত রাজভবন ছেড়ে বিজেপির রাজ্য দফতরে তাঁর অফিসকে স্থানান্তরিত করা। কারণ তাঁর আচরণ রাজ্যপালের মতো নয়। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিনিধি। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের বিদ্যুৎ মন্ত্রকের নির্দেশকে আমান্য করে তিনি বিজেপির দলীয় কর্মসূচির রূপকারের মত কাজ করলেন।’ রাজ্যের মন্ত্রী তথা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘চিকিৎসক যদি ভুল করে থাকেন তাহলে তাঁকে হাজার বার শোকজ করার অধিকার রাজ্য সরকারের আছে।’