মামলায় হেরে গিয়ে বিচারপতিকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার অভিশাপ দিলেন এক আইনজীবী৷ এমনই বেনজির ঘটনার সাক্ষী থাকল কলকাতা হাইকোর্ট৷ ক্ষুব্ধ বিচারপতি পাল্টা ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন৷
জানা গিয়েছে, বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের এজলাসে এই ঘটনাটি ঘটেছে৷ অভিযুক্তি আইনজীবীর নাম বিজয় অধিকারী৷ আদালতের অবমাননার নোটিস পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে ওই আইনজীবীকে তার জবাব দিতে হবে৷
আইনজীবীর এমন আচরণ দেখে ক্ষুব্ধ বিচারপতি বলেন, তিনি আদালতের গরিমা তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছেন এবং মহৎ একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত কোনও ব্যক্তির আচরণের পরিপন্থী৷ গরমের ছুটির পর আদালত খুললে ফৌজদারি মামলা শোনার অধিকারী কোনও উপযুক্ত ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি শুনানির জন্য তোলার জন্যও নির্দেশ দেন বিচারপতি৷
করোনো ভাইরাসের সংক্রমণ রুখতে এবং লকডাউনের কারণে গত ১৫ মার্চ থেকে শুধুমাত্র খুব জরুরি মামলাগুলি শোনা হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্টে৷ ২৫ মার্চ থেকে সেই মামলাগুলিও ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শোনা হচ্ছে৷
অভিযুক্ত আইনজীবী বিজয় অধিকারীর মক্কেল ব্যাঙ্ক ঋণ শোধ না করায় তাঁর একটি বাস নিলাম করার সিদ্ধান্ত নেয় একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক৷ ওই নিলামের প্রক্রিয়ার উপরে স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হন ওই আইনজীবী৷ বিষয়টি জরুরি বলে আদালতের কাছে দাবি করেন তিনি৷
কিন্তু বাসটি গত ১৫ জানুয়ারি ব্যাঙ্ক বাজেয়াপ্ত করেছে জানার পর জরুরি ভিত্তিতে মামলার শুনানি করতে রাজি হয়নি আদালত৷ বিচারপতি এই রায় পড়তে শুরু করতেই ক্ষুব্ধ আইনজীবী বার বার তাঁকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন৷ রীতিমতো টেবিল চাপড়ে, মাইক্রোফোনে আওয়াজ করে রায়দানে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন ওই আইনজীবী৷
নিজের নির্দেশনামায় বিচারপতি দত্ত লিখেছেন, ‘আইনজীবী বিজয় অধিকারীকে বার বারই এমন আচরণ করা থেকে বিরত থাকতে সতর্ক করা হয়৷ কিন্তু তিনি আমার ভবিষ্যৎ তিনি ধ্বংস করে দেবেন, শুধু তাই নয়, আমি করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হব বলেও তিনি অভিশাপ দেন৷ তাঁকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় আদালতের গরিমা রক্ষাই আমার কাছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং আমি আমার ভবিষ্যৎ বা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নই৷ তাঁর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করা হতে পারে বলেও ওই আইনজীবীকে সতর্ক করা হয়৷’
বিচারপতি আরও লিখেছেন, ‘সতর্কবার্তা উপেক্ষা করেই ওই আইনজীবী চিৎকার করতে থাকেন৷ যা মহৎ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত কারও আচরণের পরিপন্থী এবং এর জেরে আদালতের সম্মানহানি ঘটেছে৷’
ওই আইনজীবীর আচরণকে নিন্দনীয় বলার পাশাপাশি প্রাথমিকভাবে তা ফৌজদারি অপরাধের সামিল বলেই মনে করেছেন বিচারপতি৷ এর পরেই তাঁর বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে কলকাতা হাইকোর্ট ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে গত ২৩ মার্চ ওই আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছে৷