ওনার অমায়িক মুখ দেখেছি আমরা। গামছা গায়ে চায়ের জন্য ওকালতি দেখেছি লকডাউনের দিনে। ঘরে বসে প্রচুর মিম শেয়ার করেছি, মহিষাসুর বানিয়েছি এনাকে! এবার এনার ব্যাপারে জানি একটু।
ভদ্রলোকের নাম মৃদুল চন্দ্র দেব। রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। শ্রী কলোনি বাজারের ঠিক উল্টোদিকে থাকেন নিজের স্ত্রী ও ছেলের সাথে। একটা চার ফিট বাই পাঁচ ফিটের সংসার। ওটাই খাট, ওটাই ড্রইংরুম, ডাইনিং, কিচেন, ব্যালকনি। আমরা যারা Social distancing নিয়ে চিন্তিত তাদের জগৎ থেকে কয়েকশো মাইল দূরে এই ভারত। মৃদুল বাবু সেই ভারতের বাসিন্দা৷ রোজ যেভাবে ৫০০মিটার দূরে চা খেতে যান, সেভাবেই গেছিলেন সেদিন। ওই তিন ফিটের একটি চায়ের স্টলই ওনার রিক্রিয়েশন, ওনার কাফে, ওনার ক্যালকাটা ক্লাব! চায়ের দাম পাঁচটাকা।
মৃদুল দেবের ছেলে একটা আট হাজার টাকার চাকরি করে। মৃদুল দেব মাটি কাটে, গাঁথনি দেয়, মাথায় বালি ও বয়ে আনে। কিন্তু মৃদুল দেব কনটেন্ট ক্রিয়েটর তো না। মৃদুল দেব এন্টারটেইনার ও তো নয়৷ স্মার্ট ফোন ও নেই যে ইউটিউবে চা খাওয়ার ভিডিও শেয়ার করবে। তাই ওকে বেচেই কত্তোজনে খাচ্ছে! ও না হয় মাটি কাটুক। মাটি কাটা দেখাবো না আমরা? আমরা দেখাবো না মাটি কাটা?
মাটি কাটার লেখা বা ভিডিও শেয়ার হয়না। ওটা ঘোর বাস্তব! বাড়িতে ফুরুফুরে মেজাজে আপনার বাড়ির সামনে ড্রেনে জল পাস হচ্ছে না তার খবর দেখবেন না মিয়া খালিফা কেন সুইমিং পুলে কি রঙের বিকিনি পরে নেমেছিল জানতে উৎসাহী হবেন? রাজমিস্ত্রী মৃদুল দেবের চেয়ে চাকাকুর version টাই তাই জমছে ভালো!
জানেন তো চা কাকুর দার্জিলিং টি বা আপনার সখের গ্রিন টি খাওয়ার ও টাকা থাকেনা৷ আপনার কাফে লাতে চাকাকুর এক সপ্তাহের চালের খরচ। চাল আর আলু পেলেই তো বাঙালির চলে যায়! দাদা মানে সৌরভ গাঙ্গুলী ও সেটা জানেন। এটা ও জানেন যে এদের মতো লোকের মিম বানিয়ে শেয়ার করার চেয়ে এই ভারতটা কি অবস্থায় দিন কাটায় সেটা শেয়ার করা, সাহায্য করা জরুরি। দাদা সেই মতো তার বাড়িতে শতদ্রু দত্তকে দিয়ে চাল ও অন্যান্য কিছু জিনিস পাঠিয়ে দেন। মৃদুল বাবুর ছেলের একটা ভালো চাকরি হলে, সামান্য অবস্থার উন্নতি হলে, মৃদুল বাবু একটা বড় ঘর ভাড়া নিতে পারেন। একটা বারান্দা থাকবে যেখানে বসে উনি চা খাবেন, আলাদা রান্নাঘর, ভালো চা পাতা কেনা থাকবে দেরাজে!
মিমের মতো অকাল্পনিক ঠেকছে এখন, কিন্তু দেখবেন এক এক করে এই সবগুলো বাস্তব হবে। আমরাই করবো, ক্যাপ্টেন করবে। এগিয়ে আসুন না, এরকম মানুষগুলো যারা টানা আমাদের লকডাউনের সময়টায় মনোরঞ্জন করছে তাদের জীবনের গল্পটা ও শুনি, পারলে একটু সাহায্য করি।
এই কয়েকদিন তো অনেকটা সময়। টানা ফেসবুক করছেন, চলুন না এরকম মানুষদের খোঁজ খবর নিই। এরা বেঁচে না থাকলে আপনার মিম, আপনার খিল্লি, আপনার কনটেন্ট জোগাবে কে?
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত