করোনার থাবায় এই মুহূর্তে থরহরিকম্প গোটা দেশ। রোজই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে আক্রান্ত এবং মৃতের সংখ্যা। ফলে আরও কঠিন হচ্ছে পরিস্থিতি। এখনও অবধি পাওয়া খবর অনুযায়ী দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৫৯০। এবং মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। আর গোটা দেশের মতো এ রাজ্যেও ক্রমেই বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু। রাজ্যে সোমবার পর্যন্ত তিন জনের মৃত্যুতে এক ও একাধিক দিনের ব্যবধান ছিল। মঙ্গলবার এক দিনেই বঙ্গে দু’জনের প্রাণ কাড়ল করোনা। নীলরতন সরকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক প্রৌঢ় এবং হাওড়ার একটি বেসরকারি হাসপাতালে অন্য এক প্রৌঢ়ের মৃত্যু হয়েছে। যার ফলে রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে এখন ৫। আবার মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যাটা বেড়ে যায় একধাক্কায় অনেকটাই। আলিপুরের কম্যান্ড হাসপাতালের যে চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁর পরিবারের তিন সদস্যেরও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। অপরদিকে, দমদম আইএলএসে ভর্তি ১ প্রৌঢ়া। তাঁরও সংক্রমণের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। যার ফলে রাজ্যে একলাফে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৭!
প্রসঙ্গত, গতকাল বেলঘরিয়ার ৫৭ বছরের এক প্রৌঢ়ের দেহে করোনা ধরা পড়ে। কিডনির অসুখে ভোগা ওই ব্যক্তি চেন্নাইয়ে ডাক্তার দেখিয়ে ফেরেন ১৬ মার্চ। আক্রান্তের শ্যালক কিছু দিন আগে মুম্বই থেকে ফিরেছেন। ২৬ মার্চ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় প্রৌঢ়কে ভর্তি করানো হয় রথতলার একটি নার্সিংহোমে। ডায়ালিসিস চলছিল। এসএসকেএম হাসপাতালে নমুনা পরীক্ষায় করোনা ধরা পড়ে। আবার সেনা হাসপাতালের আক্রান্ত চিকিৎসকের সংস্পর্শে তাঁর স্ত্রী-ছেলেমেয়েও আক্রান্ত। আরজি কর হাসপাতালে ভর্তি একটি মেয়ের করোনা ধরা পড়ায় তাকে বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দু’জনের করোনা ধরা পড়েছে শেওড়াফুলি ওয়ালশ হাসপাতালে। নাগেরবাজারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ইটালি-ফেরত এক প্রৌঢ়ার করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে। টালিগঞ্জের ওই মহিলার স্বামীও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এগরা-কাণ্ডে চিকিৎসাধীন বৃদ্ধের ভায়রার ভগিনীপতির করোনা ধরা পড়ায় তাঁকেও আইডি-তে আনা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, রাজ্যে আচমকা এ হেন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ায় গোষ্ঠী সংক্রমণ রুখতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে রাজ্য সরকার। আর সেই চেষ্টারই অঙ্গ হিসেবে ১ দিনে প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে পাঠানো হয়েছে হোম কোয়ারেন্টাইনে। স্বাস্থ্য ভবন যে বুলেটিন প্রতিদিন প্রকাশ করে, সেই হিসেব মোতাবেক সোমবার পর্যন্ত এ রাজ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছিল ৪৭০৯১ জনকে। আর মঙ্গলবার বিকেলে, মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে সেই সংখ্যাটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫০৪৮২। অর্থাৎ একদিনের মধ্যে হোম কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হল ১০৩৩৯১ জনকে। অন্যদিকে, করোনাকে জয় করে বাড়ি ফিরেছেন রাজ্যের তিন আক্রান্ত। তাঁরা হলেন, রাজ্যের প্রথম করোনা আক্রান্ত এক আমলার পুত্র (লন্ডন থেকে ফিরেছিলেন), দক্ষিণ কলকাতার পণ্ডিতিয়া রোডের এক আবাসনের বাসিন্দা এক ব্যবসায়ী (যাঁর ছেলে ইংল্যান্ড থেকে ফিরেছিলেন, তাঁর মাধ্যমেই সংক্রামিত হয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী) ও স্কটল্যান্ড ফেরত হাবরার এক তরুণী। তিনজনকেই বাড়ি ছাড়া হলেও আপাতত ১৪ দিন তাঁদের থাকতে হবে হোম আইসোলেশনে।