সারা বছর পুলিশকে বড্ড গাল পারি আমরা। পুলিশকে খিস্তি করি আমরা। পুলিশকে অপদার্থ বলি আমরা। যখন মহামারী হয়, আমরা যেন বড্ড বেশী ডাক্তার আর স্বাস্থ্য কর্মীদের নিয়েই মাতামাতি করি। আচ্ছা দুর্গা পূজার সময় ওই যে পাঁচদিন আমাদের ছুটি ওদের নয়, কই একবার ও হেসে একটা থ্যাংক ইউ বলি? বা নির্বাচনের সময় আমরা যখন ভোটটা দিই, ওরা যখন টানা দাঁড়িয়ে থাকে? একবার জল এগিয়ে দিই? আচ্ছা ইডেনে যখন আমরা একটা সিক্সার মারার পরে দারুণ উল্লাস করি, কখনো দেখেছেন আপনার দিকে টানা লক্ষ্য রাখছে যে কনস্টেবল তার উত্তেজনা? কিংবা বনধের দিন, ওই অফিসারটাকে যে বাবা বাছা করে আপনাকে ট্রেন লাইন থেকে সরে আসতে বলে?
পুলিশ ও রক্ত মাংসের মানুষ। পুলিশের যে অফিসারটা কাল কেস দিয়েছিল, সে বাড়ি ফিরে ফেসবুকে হয়তো একটা দারুণ কবিতা লিখেছিল ছদ্মনামে। কিংবা যে দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণে লিড করছিল, সে দারুণ ছোট গল্প লেখে, আইপিএস যে ভদ্রলোক মৃত দেহের ভীড়ে রোজ গোমড়া সাজে, সে অনেকের চেয়ে ভালো থ্রিলার লেখে আর জ্যাম হলেই যাকে মা মাসি তুলে খিস্তি করেন সে রোজ রাতে একা অন্ধকার ঘরে গিটার বাজায়।
আমরা পুলিশ ভাবলেই অমরিশ পুরীর মতো কাউকে ভাবি। ভালো কেউ হলে রঞ্জিত মল্লিক বেল্ট হাতে৷ এর মাঝামাঝি আপনার আমার বাড়ির যে ছেলেপিলেগুলো যাদের ও মা আছে, যাদের বাবা রোজ নিয়ম করে মাস্কটা এগিয়ে দেয়, যার বউ রোজ দুশ্চিন্তা করে, যার বোন লজ্জায় বন্ধুদের বলে না, তারাই কিন্তু আমাদের অসময়ের সুপারহিরো।
প্রিয় পুলিশ, মাস্ক আর স্যানিটাইজার পেয়েছেন তো? কিভাবেই বা আপনাকে স্যালুট দেবো। এই করোনার মহামারীতে আপনি ওই লাটের বাটদের যদি প্যাদাতে পারেন, ওই যারা এখনো মাঠে বসে তাস খেলছে তাদের খ্যাদাতে পারেন, যারা ভাবছে সব্জি বাজারে ভীড় করাটা গণতান্ত্রিক অধিকার, গাড়ি নিয়ে ছুটির দিনে কোন কারণ ছাড়া ধরা পরে কমিশনারকে ফোনটা নাগরিক প্রিভিলেজ, তাদের চাবকান। স্যালুট থাকবে।
চোদ্দদিন আপনি সুযোগ পেয়েছেন, ক্যালান। অকারণে অঞ্চলে চক্রিপাক খেতে দেখলে ক্যালান, বাইক রোমিও দেখলে কেস দিন, চায়ের দোকানে মজলিস বসলে ভেস্তে দিয়ে তুলে নিন জিপে। কেস দিন সাহেব। মোটা টাকার কেস বা নন-বেলেবল ধারায় ১৪দিন রেখে দিলেই পরের মহামারীতে ভলেন্টিয়ার হবে এই পাবলিক৷
আপনার ওই নববিবাহিতা স্ত্রী, আপনার অশীতিপর মা, আপনাকে দেখে ইন্সপেক্টর হতে চায় যে ভাই, তাদের সব্বার বাঁচার রাস্তা করে দিতে, Social distancing আর কারফিউ সাফল্যমণ্ডিত করতে দাবাং হোন গুরু। পাবলিক বাংলার পাড়ায় পাড়ায় একটা করে সিংঘম, সিম্বা আর সূর্যবংশীকে দেখতে চায় এই কয়েকদিন, লকডাউনের এই সময় অবাধ্যতা দেখে আপনার কড়া হাতে দমন দেখতে চায়, আপনাকে ও ধন্যবাদজ্ঞাপন করতে চায়।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত