ভারতীয় ফুটবলে অবসান হল একটি যুগের। আজ বেলায় চিরতরে বিদায় নিলেন কিংবদন্তি ফুটবলার তথা কোচ পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। প্রবাদপ্রতিম ফুটবলারের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা তথা দেশের ফুটবল মহল। কারণ ঝিমিয়ে পড়া ময়দানকে ভোকাল টনিক দেওয়ার ভদ্রলোকই আর রইলেন না।
গত বেশ কয়েক বছর ধরেই হুইলচেয়ার তাঁর সঙ্গী ছিল। বাইরের অনুষ্ঠানে যাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। মাঝে হাসপাতালে ভর্তি হলেও ফিরেছিলেন বাড়িতে। কিন্তু এবার আর ফিরলেন না। নিভে গেল ময়দানের ‘প্রদীপ’। গত বেশ কিছুদিন ধরেই তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক ছিল। সোমবার রাতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মেডিক্যাল বুলেটিন প্রকাশ করে জানিয়ে দেয়, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন না পিকে। তাঁকে রাখা হয়েছিল ভেন্টিলেশনে। কিন্তু এদিন শেষ হল যুদ্ধ।
ফুটবল জীবনে অনবদ্য সাফল্যের পাশাপাশি কোচ হিসেবেও দুর্দান্ত সফল ছিলেন পিকে বন্দ্যোপাধ্যায়। ফুটবলার হিসেবে ইস্টার্ন রেলের জার্সি গায়ে খেলেছেন পিকে। ১৯৫৮ সালে কলকাতা লিগ চ্যাম্পিয়ন ইস্টার্ন রেলের সদস্য ছিলেন। কোনও বড় ক্লাবে না খেললেও জাতীয় দলের হয়ে একাধিক সাফল্য রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। ১৯৫৬ সালের মেলবোর্ন অলিম্পিকে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন তিনি।
১৯৬০-য় রোম অলিম্পিকে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে গোল করেছিলেন। ১৯৫৮, ১৯৬২ ও ১৯৬৬ সালের এশিয়ান গেমসেও ছিলেন ভারতীয় দলে। এর মধ্যে ১৯৬২ এশিয়ান গেমসে সোনা জেতে ভারত। তবে শুধু ফুটবলার হিসেবে নয়, কোচ হিসেবেও তাঁর সাফল্যের তালিকা দীর্ঘ। তাঁর পেপ টকে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন অনেক ফুটবলার। কোচিং জীবনে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে পিকে এবং মোহনবাগানের হয়ে প্রয়াত অমল দত্তের ফুটবল বুদ্ধির লড়াই দেখতে মুখিয়ে থাকতো সকলে।
তবে গত কয়েক বছরে অনেকটাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। গত ২১ জানুয়ারি তাঁর শারীরিক সমস্যা বাড়ে। তাঁকে ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। যদিও ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসেন। তবে দিন পনেরো পর ফের অসুস্থ হয়ে ফের ভর্তি হন হাসপাতালে। প্রায় মাসখানেক সেখানেই ছিলেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে তাঁর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। দ্রুত তাঁকে ভেন্টিলেশনে স্থানান্তর করতে বাধ্য হন চিকিৎসকরা। বেসরকারি হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিলেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসও। এদিন তাঁর মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা। দাদাকে হারিয়ে শোকবিহ্বল ভাই প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেক প্রাক্তন ফুটবলারও।