বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে এসে, দেশবাশীর কাছে রবিবার ‘জনতা কার্ফু’ পালনের অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সঙ্গে করেছেন আরও একগুচ্ছ আবেদন। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, গতকাল দেশকে নির্দিষ্ট কোনও পথনির্দেশিকা দেখাতেই পারেননি প্রধানমন্ত্রী। দেননি সাধারণ মানুষকে কোনও সাহায্যের আশ্বাসও।
মোদী জানিয়েছেন, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের নেতৃত্বে ‘কোভিড-১৯ ইকনমিক রেসপন্স টাস্ক ফোর্স’ নামে একটি কমিটি তৈরি হবে। ওই কমিটি বিভিন্ন মহলের সঙ্গে কথা বলে করোনার চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় সিদ্ধান্ত নেবে। রাজ্যগুলিকে তাঁর আর্জি, বেসরকারি সংস্থাগুলি যাতে কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করায়, তার নির্দেশ দিক রাজ্য। আর শিল্প, ব্যবসা, ধনী সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন, তারা যাঁদের থেকে পরিষেবা নেয়, সেই নিম্ন আয়ের মানুষের আর্থিক প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখতে।
এই প্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা রাজীব গৌড়ার বক্তব্য, ‘করোনার ফলে দিনমজুর, হোটেল শিল্পে কাজ করা মানুষের ক্ষতি হচ্ছে। সরকার অন্যকে অনুরোধ না জানিয়ে নিজে গরিব মানুষের জনধন অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠাক।’ সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘দিন আনা দিন খাওয়া মানুষদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুবিধা নেই। তাদের জন্য তিনি কী করলেন প্রধানমন্ত্রী? সরকার অন্তত গুদামে মজুত অতিরিক্ত খাদ্যশস্য তাদের হাতে তুলে দিতে পারে।’
আবার মোদী বলেছেন, ‘খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে এক পা-ও নয়।’ কিন্তু খোদ করোনা মোকাবিলায় এই নিদান দেওয়া মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার এখনও সংসদে অধিবেশন চালিয়ে যাচ্ছে কীভাবে, তা নিয়েও জোর বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিশেষত যেখানে রোজ গড়ে প্রায় ৭ হাজার লোকের আনাগোনা সংসদে! এ নিয়ে ইতিমধ্যেই অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন বিরোধীরা।
একই সঙ্গে বিরোধীদের প্রশ্ন, করোনা রুখতে রাজ্যগুলিকে কী করতে হবে, তা যখন প্রধানমন্ত্রী বলে দিলেন, জারি হল নির্দেশিকা, তখন শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স নিছকই আলঙ্কারিক হয়ে গেল না কি? যেমন তৃণমূলের রাজ্যসভার দলনেতা ডেরেক ও’ব্রায়েনের প্রশ্ন, ‘আজই মোদী সরকার সমস্ত রাজ্য সরকারকে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দিয়েছে। তা হলে ঘটা করে আগামীকাল মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স করার অর্থ কী? যুক্তরাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি এটি ঠাট্টা।’
উল্লেখ্য, রাত ৮টায় প্রধানমন্ত্রী জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবে শুনেই জল্পনা ছড়িয়েছিল, তবে কি নোটবন্দীর পরে করোনা ঠেকাতে সারা দেশকে লক-ডাউন করার কথা ঘোষণা করবেন মোদী? কিন্তু মোদীর ভাষণ শোনার পরে হতাশ প্রায় গোটা দেশই। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, শুধু রবিবার ১৪ ঘণ্টার ‘জনতা কার্ফু’ করে সত্যিই কি খুব লাভ হবে?
যদি সকলকে বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আটকে থাকার আহ্বান জানানোই উদ্দেশ্য হয়, তা হলে ওই দিনই বিকেল পাঁচটায় বাড়ির দরজা-বারান্দা-ব্যালকনিতে পাঁচ মিনিটের জন্য এসে হাততালি দিতে কিংবা ঢোল-ঘণ্টা বাজাতে বলার অর্থ কী? জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাঁরা জরুরি পরিষেবা দিয়ে চলেছেন, তাঁদের ঋণ স্বীকার অবশ্যই প্রশংসনীয়। কিন্তু ওই ভাবে তা করতে গিয়ে বরং জমায়েতের আশঙ্কা বাড়বে না কি?
তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়ের কটাক্ষ, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা নাটুকে। তিনি চাইছেন রবিবার যেন সমস্ত নাগরিক হাততালি দেয়, গান গায়, ঢোল বাজায়। ইটালিয়ানদের অনুকরণ। কী নিষ্ঠুর রসিকতা!’ আর ডেরেক বলেন, ‘আরও অনেক বিষয়ে শুনতে চেয়েছিলাম। করোনা-প্রতিরোধ ব্যবস্থা, তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পুঁজি, রাজ্যগুলির জন্য সহায়তা, ব্যাপক ভাবে স্বাস্থ্য পরীক্ষার বন্দোবস্ত, সমস্ত রাজ্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার দিকনির্দেশ।’ তাঁর স্পষ্ট ইঙ্গিত, প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে এ সব মেলেনি।