‘ফ্যাসিবাদী শক্তি আসামে বাঙালি নির্মূল অভিযান চালাচ্ছে’- আসামে বাঙালিদের ভোগান্তি দেখে বারবারই এই অভিযোগ উঠেছে সে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে৷ ইতিমধ্যেই লাখ দুয়েক বাঙালি নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণে ব্যস্ত। জেল খাটছেন ৯৮৮ জন। আবার ২৭ জন প্রাণও হারিয়েছেন ডিটেনশন ক্যাম্পে। আর এবার তো নাগরিকত্বের সমস্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, প্রায় এক বছর জেল খাটতে হল এক বাঙালিকে। যদিও সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন আসামের বদরপুরের জয়দেব ঘোষ (৫০)। তবে গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশ, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালেই জয়দেবকে নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে।
২০০৯ সালে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালই তাঁকে ভারতীয় বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু গত বছর ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালই তাঁকে একতরফাভাবে ‘বিদেশি’ ঘোষণা করে ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠায়। তাই বন্দিদশা সাময়িক কাটলেও, নিশ্চিত হতে পারছেন না বরাক উপত্যকার বদরপুরের এসটি রোডের বাসিন্দা জয়দেব। তাঁর বাবার নামে ১৯৫৩ সালের ২৭ মার্চেরক জমির দলিল রয়েছে। ভারতীয় পাশপোর্ট রয়েছে ১৯৫৩ সালের। তবু তাঁর নাগরিকত্ব প্রশ্ন চিহ্নের সামনে। ৫ ভাইয়ের ৩ ভাই ভারতীয় প্রমাণিত। বাদ তিনি, আরেক ভাই ও তাঁর মা। ২০০৯ সালেও একবার ডি ভোটারের নোটিস পেয়েছিলেন জয়দেবরা। কিন্তু সেবার ট্রাইব্যুনাল ছাড় দেয়। ২০১৭ সালেও তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। সেবার বেঁচে গেলেও গত বছর হাজিরই হতে পারেননি ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে।
হাজির না হওয়ার কারণ অবশ্য হাইকোর্টকে জানিয়েছেন জয়দেব। তাঁর একমাত্র ছেলে ২০১৮ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ব্লাড ক্যান্সারে মারা যায়। লোকের দোকানে কর্মচারী জয়দেব ছেলের চিকিৎসা করাতেই সর্বস্বান্ত হয়ে যান। উকিলকেও টাকা দিতে পারেননি। তাই গত বছর ১ মে একতরফাভাবে বিদেশি বলে ঘোষণা করা হয় জয়দেবকে। ২ মে শিলচর জেলের ভিতর ডিটেনশন ক্যাম্পে পাঠানো হয়। অবশেষে জামিন পেলেন জয়দেব। কিন্তু তাঁকে ফের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালেই নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন আরও টাকা। টাকার অভাবে ছেলের চিকিৎসাই ঠিকমতো করাতে পারেননি জয়দেব। বাঙালিদের এ হেন অযথা হয়রানির তীব্র নিন্দা করেছেন মানবাধিকার কর্মী সাধন পুরকায়স্থ। আসাম রাজ্য নাগরিক অধিকার সমন্বয় সমিতির চেয়ারম্যান তপোধীর ভট্টাচার্যের অভিযোগ, বাঙালিদের নিকেশ করতেই ফ্যাসিবাদী আক্রমণ চালাচ্ছে বিজেপি।