রঙিন ডানা মেলতে শুরু করেছে ‘ভোরের আলো’। মুখ্যমন্ত্রীর স্বপ্নের প্রকল্প ‘গজলডোবা মেগা ট্যুরিজম হাব’। ১৭ আগস্ট জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন হবে। থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিরও। সব কিছু ঠিক থাকলে তিনি উত্তরবঙ্গে পা রাখবেন ১৬ আগস্ট। সার্কিট বেঞ্চ পর্ব মিটিয়ে যেতে পারেন ‘ভোরের আলো’ দেখতে। এই সম্ভাবনা তৈরি হতেই গজলডোবায় এখন যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ চলছে। গজলডোবায় মোবাইলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয়, তার জন্য মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডার সংস্থা টাওয়ার নির্মাণ করছে। গাছ লাগানো হচ্ছে, সংস্কার করা হচ্ছে পথবাতির। মুখ্যমন্ত্রী যদি তাঁর স্বপ্নের পর্যটন কেন্দ্রে রাত্রিযাপন করতেও চান, তার জন্য আগাম ব্যবস্থা করে রাখা হচ্ছে।
ইতিমধ্যে তৈরি করা হয়েছে পরিবেশ–বান্ধব ৬টি কটেজ। এর মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর জন্য একটি কটেজ বিশেষভাবে সাজিয়ে তোলার কাজ চলছে। পাশাপাশি সেচ দপ্তরের যে বাংলো রয়েছে তিস্তা ব্যারেজের পাশে, যা ‘হাওয়ামহল’ নামে পরিচিত, তার একটি কক্ষ নতুন করে সংস্কার করা হয়েছে। সাজানো হয়েছে আরও তিনটি কক্ষ। কটেজ ছাড়াও হাওয়ামহলে অনায়াসে রাত্রিযাপন করতে পারবেন।
গত এক মাসে পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বারবার পরিদর্শনে গেছেন। সময়সীমা দিয়েছেন ১০ আগস্টের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের সমস্ত কাজ শেষ করে ফেলতে। পর্যটনমন্ত্রী জানিয়েছেন, আমরা আমাদের কাজের জায়গা ঠিকঠাক করে রাখতে চাইছি। আশা করছি, প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হয়ে যাবে। সেচ দপ্তরের তিস্তা ব্যারেজ ডিভিশনাল এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার দেবব্রত দত্ত জানিয়েছেন, হাওয়ামহলও মুখ্যমন্ত্রীর থাকার উপযুক্ত করে তোলা হয়েছে।
বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ৪৫ কিলোমিটার, শিলিগুড়ি শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার, জলপাইগুড়ি থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ২০৮ একর জমির ওপরে গড়ে উঠছে মেগা ট্যুরিজম হাব। একদিকে তিস্তার বিপুল জলরাশি, অন্যদিকে বৈকুণ্ঠপুরের ঘন জঙ্গল, মাঝে ক্যানভাসের মতো দাঁড়িয়ে আছে হিমালয়। সব মিলিয়ে শিল্পীর তুলিতে আঁকা ছবির মতো একটি জায়গা। প্রথম মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরেই মমতা ব্যানার্জি আবিষ্কার করেছিলেন গজলডোবা। যেমন দেখা তেমন কাজ। ইকো ট্যুরিজম পার্ক গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। সরকারি উদ্যোগে তৈরি হচ্ছে যুব আবাস। থাকছে গলফ কোর্স, নৌকাবিহার, আয়ুর্বেদিক স্পা ভিলেজ, সুইমিং পুল, হাতি সাফারি, পিলখানা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক। পালতোলা নৌকায় যাতে পর্যটকরা ভ্রমণ করতে পারেন, তার জন্য কুড়িটি নৌকা তৈরি করা হয়েছে।
পর্যটনমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, এখানে রাত্রিযাপনের সঙ্গে জঙ্গল সাফারি, হাতি সাফারি, বেঙ্গল সাফারির মুক্ত চিড়িয়াখানা সমস্ত একসঙ্গে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে। জল, জঙ্গল, নদী, কাঞ্চনজঙ্ঘা, বন্যপ্রাণ— সব মিলবে হাতের মুঠোয়। একেবারে রোমাঞ্চকর অনুভুতি পাবেন পর্যটকরা। ইতিমধ্যে গত জানুয়ারিতে বিশ্বের ২০টি দেশের ৫৬ জন প্রতিনিধি গজলডোবা ঘুরে মুগ্ধতার কথা জানিয়ে গেছেন। তাঁদের বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, এই প্রকল্প শেষ হলে বিদেশি পর্যটক আসতে শুরু করবেন। আপাতত মুখ্যমন্ত্রীর অপেক্ষায় ‘ভোরের আলো’।