গত আগস্টেই ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক মিশিয়ে চারটি বড় ব্যাংক গঠনের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে সেই সিদ্ধান্তে সীলমোহর দেওয়া হল। নতুন চারটি ব্যাঙ্ক ১ এপ্রিল থেকে চালু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশে যাবে ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স এবং ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। এর ফলে ব্যবসার পরিমাণের হিসেবে (১৮ লক্ষ কোটি টাকা) পিএনবি হতে চলেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ব্যঙ্ক। প্রথম স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া। অন্যদিকে, কানাড়া ব্যাঙ্কের সঙ্গে মিশবে সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক এবং গঠিত হবে দেশের চতুর্থ বৃহত্তম ব্যাঙ্কিং প্রতিষ্ঠান। ইউনিয়ন ব্যাঙ্কের সঙ্গে অন্ধ্র ব্যাঙ্ক ও কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক মিশিয়ে তৈরি হবে পঞ্চম বৃহত্তম ব্যাঙ্ক । এবং ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক ও এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক মিশিয়ে দেশের সপ্তম বৃহত্তম ব্যাঙ্ক গঠিত হবে।
ব্যাঙ্কগুলির পরিচালন ব্যবস্থা আলাদা। এগুলিকে এক ছাদের তলায় আনতে আধিকারিকদের নিয়ে মোট ৩৪টি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। ব্যাঙ্কগুলির নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলতে নাম ও লোগোর বিষয়েও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আলোচনায়। গত বছর আগস্টে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী দেশের মুষড়ে পড়া অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে কুড়ির বেশি টোটকা দিয়েছিলেন। সেদিনই বলেছিলেন, আগামীতে আরও চমক আসছে। তার ক’দিন পরেই ১০টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক মিশিয়ে দিয়ে চারটি বড় ব্যাঙ্ক গঠনে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন। সেই সময় অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, প্রতিটি ব্যাঙ্ককেই আর্থিক সাহায্য করবে সরকার। এর জন্য মোট ৫৫,২৫০ কোটি টাকা খরচ হবে। এই ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের ফলে ২৭টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক কমে হবে ১২টি। কেন্দ্রের ব্যাখ্যা, বৃদ্ধির হার বাড়াতে দেশের প্রয়োজন বৃহৎ ব্যাঙ্ক। সেই কারণেই ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের সিদ্ধান্ত। দেশের এখন হবে মূলধন, আয়তন, দক্ষতা ইত্যাদির ভিত্তিতে ছ’টি বৃহৎ ব্যাঙ্ক। ফলে তা উচ্চহারে বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে এবং মধ্য অর্থনীতির দেশগুলির সঙ্ঘ থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে ভারত।
অবশ্য, আগেই ব্যাঙ্ক কর্মচারী ইউনিয়নগুলি এই সংযুক্তিকরণের প্রতিবাদ করেছে। তারা কর্মী সঙ্কোচনের আশঙ্কা করছে। তবে অর্থমন্ত্রকের দাবি, ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের জন্য একজনেরও চাকরি যাবে না। বরং, এই বিশাল ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণ পদক্ষেপ ৫ লক্ষ কোটি ডলারের অর্থনীতি গড়ার ক্ষেত্রে স্তম্ভ নির্মাণ করবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ব্যাঙ্কগুলির সংযুক্তিকরণের জেরে সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক গ্রাহকদের নতুন অ্যাকাউন্ট নম্বর ও কাস্টমার আইডি দেওয়া হতে পারে। যা বিভিন্ন প্রকল্প খাতেও আপডেট করতে হতে পারে গ্রাহকদের। এসআইপি বা ইএমআই-য়ের-এর ক্ষেত্রেও নতুন করে ফর্ম পূরণ করতে হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, সংযুক্তিকরণের ফলে গৃহঋণ, গাড়িঋণ, স্থায়ী জমা-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই বিভিন্ন মেয়াদে সুদের নতুন করে হার ধার্য হবে। এছাড়াও ঢেলে সাজানো হবে বিভিন্ন পরিষেবার ব্যাংকগুলির বিভিন্ন প্রকল্প।
এছাড়া, ব্যাঙ্কগুলির পদ্ধতিতে পরিবর্তনের জেরে আইএফএসসি কোড যে পালটাবে, তা নিশ্চিত। এর ফলে নতুন চেকবুক, পাসবুক এমনকী ডেবিট কার্ডেও পরিবর্তন হতে পারে। অ্যাকাউন্টে কোনও পরিবর্তন হলে, ডেবিট-ক্রেডিট কার্ডে তার প্রভাব পড়বেই। তবে স্বাভাবিক নিয়মেই এ সম্পর্কে গ্রাহকদের তথ্য জানানো হবে। এছাড়াও এদিন ব্যবসা পদ্ধতি সহজের লক্ষ্যে ২০১৩-র কোম্পানি আইনের সংশোধনী এবং এয়ার ইন্ডিয়ায় ৪৯ শতাংশের বেশি এফডিআই-এর প্রস্তাবে সায় দিয়েছে মন্ত্রিসভা।