অনাবশ্যক দেরি করছে রেল। আর তার ফলে যেমন ক্ষতি হচ্ছে রেলের, তেমনি এর ফল ভুগছে ব্যাবসায়ীরাও। হ্যাঁ, এখনও রেলের তরফে কোনও বাণিজ্যিক বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়ায় আটকে রয়েছে নিউ জলপাইগুড়িতে (এনজেপি) ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোর কাজ। যে কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ব্যবসায়ীদের। ক্ষতি হচ্ছে রেলেরও। বণিকসভা কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ বা সিআইআই ইতিমধ্যেই দার্জিলিংয়ের সাংসদকে বিষয়টি জানিয়েছে। তাতে কাজ না হলে প্রয়োজনে রেলমন্ত্রীর কাছে দরবার করার কথাও ভাবছে তারা।
বণিকসভা সিআইআই সূত্রে জানা গেছে, নিউ জলপাইগুড়ির টি পার্ক সংলগ্ন এলাকায় ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো তৈরি হওয়ার কথা। এব্যাপারে প্রয়োজনীয় সবরকম অনুমোদন হয়ে গেছে। তারপরে আঠেরো মাস কেটে গেলেও রেলের তরফে জারি হয়নি কমার্সিয়াল নোটিফিকেশন। সিআইআইয়ের নর্থ বেঙ্গল জোনাল চেয়ারম্যান সঞ্জিত সাহা বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমরা দার্জিলিংয়ের সাংসদের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনিও গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। কাজ না হলে প্রয়োজনে দিল্লিতে গিয়ে রেলমন্ত্রকের কাছে দরবার করব, আমরা শিল্পোদ্যোগীদের সঙ্গে আছি।’
প্রসঙ্গত, নিউ জলপাইগুড়িতে গড়ে ওঠা টি পার্কে ৯ একর জমিতে ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপোর কাজ শুরু হয় ২০০৫ সালে। ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য এই জায়গার আলাদা গুরুত্ব আছে। এই জায়গা থেকে প্রতিবেশী চার দেশ চিন, নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশ খুবই কাছে। সেজন্য এখান থেকে আমদানি ও রফতানি করা বেশ সুবিধাজনক। বাণিজ্যিক ভাবে এই জায়গা বেশ সম্ভাবনাময় বলেই মনে করছে উত্তরবঙ্গের শিল্পমহল। সেদিকে তাকিয়েই ৩০ কোটি টাকা দিয়ে এখানে ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো গড়ে তোলা হয়েছে।
সংলগ্ন নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে এখানে রেল ট্র্যাকের মাধ্যমে রেক যাতায়াত করার সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি ইতিমধ্যেই সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। এজন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত রকম অনুমোদন দিয়ে দিয়েছে রেল। রেলের তরফে রেল ট্র্যাকের পরীক্ষা নিরীক্ষা করা হয়ে গেছে। বাকি রয়েছে শুধু কমার্শিয়াল নোটিফিকেশন। এই বিষয়টি প্রায় আঠেরো মাস ধরে ঝুলে রয়েছে। এ নিয়ে গুয়াহাটি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে নির্মাণকারী সংস্থা। হাইকোর্টও রেলের ভূমিকার সমালোচনা করে নির্মাণকারী সংস্থার পক্ষে রায় দিয়েছে। তারপরেও কেন জারি হচ্ছে না প্রয়োজনীয় বিজ্ঞপ্তি? কোনও কোনও শিল্পকর্তা মনে করছেন, রেল আধিকারিকের গাফিলতিতেই এমনটা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, নিউ জলপাইগুড়ির কাছে এই ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো চালু হয়ে গেলে অধিকাংশ আমদানি-রপ্তানি এখান থেকেই সম্ভব হবে। এখান থেকে শুল্ক দফরের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে নিজেদের পণ্য গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এতে কলকাতা পর্যন্ত পণ্য পাঠানো এবং কলকাতা থেকে পণ্য শিলিগুড়ি পর্যন্ত নিয়ে আসার বিপুল খরচ কমবে। এর ফলে অনেক কম খরচে আমদানি ও রপ্তানি করা সম্ভব হবে। আবার ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো চালু হয়ে গেলে এখানে গড়ে উঠবে অনুসারী শিল্প ও প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোও। যার ফলে এখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।
তবে এই প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন আটকে থাকায় রেলের রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে। সিআইআইয়ের হিসাব অনুযায়ী, আঠেরো মাস আগে এই ডিপো চালু হয়ে গেলে এতদিনে বাড়তি ১০০ কোটি টাকা আয় হতে পারত রেলের। অর্থাৎ এই পরিমাণ রাজস্ব হারিয়েছে রেল। উল্টো দিকে এটি চালু না হওয়ায় বাড়তি ব্যয় বহন করতে হচ্ছে শিল্পোদ্যোগীদের। সিআইআই মনে করে, এই ইনল্যান্ড কন্টেনার ডিপো চালু হয়ে গেলে কলকাতা বন্দরের উপর চাপ অনেক কমবে। একই সঙ্গে শুধু উত্তরবঙ্গের শিল্পমহল নয়, দেশের পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চলের শিল্পমহল সমৃদ্ধ হবে।