বিজেপির ধর্মান্ধতা, বিদ্বেষ আর দেশকে গোল্লায় পাঠানোর রাজনীতির বিরুদ্ধে দিল্লির ভোটের ফল একটি প্রবল চপেটাঘাত। মোদি-অমিতরা দেশটাকে নিজেদের জমিদারি ভেবে বসেছিলেন। জানি, এতেও তাদের সম্বিৎ ফিরবে না, তবে বঙ্গে নব্য বিজেপিদের ‘একে তাড়াবো, ওকে মারবো’ গোছের হাঁকডাক কিছুদিনের জন্য একটু কমবে বলেই মনে হয়। আপনারাও জানেন, আমিও জানি দিল্লির ভোটের এই ফলে কোন চমক নেই, এটা প্রত্যাশিত ছিল। মানুষের জীবন, জীবিকা, অর্থনীতি সবকিছুকে সঙ্কটে ফেলে মূল সমস্যা থেকে নজর ঘোরাতে এনআরসি, ক্যা ইত্যাদি অদরকারি বিষয় নিয়ে তারা যে বিভাজনের রাজনীতি শুরু করেছিলেন মানুষ তার জবাব দিয়েছেন। এই ফল গোটা দেশের এনআরসি, ক্যা বিরোধী লড়াইয়ের পালে নতুন বাতাস দেবে।

দিল্লির ফল বিজেপির শেষের শুরু হওয়ার সঙ্কেত। সারা দেশেই বিজেপি বিরোধী মনোভাব জোরদার হচ্ছে, এর আঁচ বঙ্গেও পড়ছে। আজ বাঁকুড়ায় মুখ্যমন্ত্রীর জনসভাতে উথলে পড়েছে জনজোয়ার। একটা জিনিস আমি লক্ষ্য করছি এনআরসি, ক্যা বিরোধী আন্দোলনের তীব্রতা যত বাড়ছে ততই বাড়ছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সভার ভিড়। এই উৎসাহ, লড়াকু মেজাজ আমি নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর আন্দোলনের সময় দেখেছি। রাজ্যে ১৮টা আসন দখল করার পর পাড়ায় কেউ চেনেনা এমন বিজেপি নেতারাও বিরাট হাঁকডাক শুরু করেছিলেন। ইদানিং তারাও বেশ ম্রিয়মাণ। লড়াই ও সঙ্কট মানুষের চেতনা ফেরায়, তাকে উদ্বুদ্ধ করে। সমস্যা মানুষের লড়াইয়ের নতুন পথ খোঁজার রাস্তা দেখায়। বিজেপির দেশ ভাঙার রাজনীতির পরিণতিতেই তৈরি হয়েছে শাহিনবাগ, পার্ক সার্কাস, জেএনইউ, যাদবপুরের প্রতিবাদী আন্দোলন। দিল্লির ভোটে আপ এর বিপুল জয় মানুষের এই প্রতিবাদের প্রতিফলন।
বিজেপির বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সব মানুষের ঐক্যই এখন সবচাইতে বড় কথা, সময়ের দাবি। কিন্তু কংগ্রেস, সিপিএমের মত সুবিধাবাদী দলগুলি তা বোঝে না। লড়াই নয়, নানাভাবে বিভেদ সৃষ্টি করে রাজনীতিতে ভেসে থাকাই তাদের আসল উদ্দেশ্য। দেশের প্রতিটি নির্বাচনের ফল তাদের ধারাবাহিকভাবে আরও অপ্রাসঙ্গিক ও দুর্বল করে দিলেও এই দল দুটির নেতাদের সম্বিৎ ফিরছে না। প্রবল বিজেপি বিরোধী হাওয়াতেও দিল্লিতে কংগ্রেসের ফল হতাশাজনক। বামেদের তো এখন দূরবীন দিয়েও দেখা যায় না। গণশক্তি ও দু একটি কলেজ-ইউনিভার্সিটির নির্বাচনের বাইরে তারা আর কোথাও নেই।
কিছুই করতে না পেরে প্রবল হতাশায় তারা দিদি-মোদি সেটিং বলে একটা আজগুবি তত্ত্ব ফেরি করছে। যার মোদ্দা কথা হল তৃণমূলনেত্রীর মোদি বিরোধী লড়াই স্রেফ একটা লোকদেখানো ব্যাপার। অথচ ঘটনাটা ঠিক উল্টো। নিজেদের স্বার্থে দেশের বিরোধী রাজনীতিকে দুর্বল করতে কংগ্রেস-সিপিএম নিজেদের মধ্যে সেটিং করেছে। ইয়েচুরি-কারাট-বিজয়ন-বিমানরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে যতটা গাল পাড়েন মোদি-অমিতদের বিরুদ্ধে ততটা শব্দ খরচ করেন না। আশ্চর্যজনকভাবে মোদি-অমিতরাও সিপিএমের বিরুদ্ধে একটি কথাও বলেন না। সেটিং এর তত্ত্ব ফেরি করে সিপিএমের প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার চেষ্টা করা ছাড়া এখন আর কোন উপায় নেই। গোটা দেশে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে প্রধান মুখ যে এখন বাংলার তৃণমূলনেত্রী এটাই তাদের আসল গাত্রদাহ। তারা নিজেরাই বুঝতে পারছেন তাদের এই নোংরা খেলা মানুষ ধরে ফেলেছেন। একসময় ক্ষমতায় থাকার সময় শাসকদল হিসেবে দুটি দলই ব্যর্থ হয়েছিল, এখন বিরোধী দল হিসেবেও তারা ব্যর্থ। এদিকে সময় পেরিয়ে গেছে, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পতাকা উঠে এসেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, কেজরিওয়ালদের হাতে।
বিজেপিকে কেজরিওয়ালের প্রবল চপেটাঘাতে তাদের হুঁশ ফিরলে দেশের মঙ্গল।
মতামত লেখকের ব্যক্তিগত