প্রতি পদে পদে প্রতিহত হতে হচ্ছে বিজেপিকে। হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা রাজ্য। পরিসংখ্যান বলছে, গত দেড় বছরে ‘বিজেপিমুক্ত’ হয়েছে ছ’টি রাজ্য। প্রবল বিক্ষোভ উপেক্ষা করে CAA কার্যকর করেছে পদ্মশিবির। উত্তাল আন্দোলনের মধ্যেই দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন ছিল। তাতেও দাঁত ফোটাতে ব্যর্থ মোদি-শাহ জুটি। প্রথমদিকে লড়াইয়ে থাকলেও বেলা যত গড়িয়েছে ক্রমশ পিছিয়ে পড়েছে বিজেপি। শেষপর্যন্ত তাদের হাতে দিল্লির মাত্র ৭টি আসন। অথচ রাজধানীর সাতটি লোকসভা আসনই জিতেছিল তারা। তাহলে কেন এমন পরিস্থিতি? কেনই বা একের পর এক রাজ্য হাতছাড়া হচ্ছে? এমন পরিস্থিতিতে দলের অন্তর্তদন্ত করা উচিত বলে মনে করছেন দলের বর্ষীয়ান নেতারা।
গত দেড় বছরে বিজেপির হাতছাড়া হয়েছে মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ড, তেলেঙ্গানা। দিল্লিতেও ২৭০ জন সাংসদ, ৭০ জন মন্ত্রী প্রচারের কোনও কাজে এল না। শতাংশের নিরিখে ভোট ও আসন বাড়লে সন্তোষজনক ফল করতে পারেনি বিজেপি। স্বভাবতই হারের কারণ নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ সুব্রক্ষ্মণ্যম স্বামীর কথায়, ২০১৪ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত দলের কাঠামো খতিয়ে দেখা উচিত। তাঁর অভিযোগ, বহু রাজ্যে নিজেদের প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি বিজেপি, তার ফল হাতেনাতে পেয়েছে নেতৃত্ব। একই কথা বলছেন দিল্লির বিজেপি প্রার্থী কপিল মিশ্র। তাঁর কথায়, “কিছু একটা গড়বড় হচ্ছে। খতিয়ে দেখা দরকার।” দিল্লির সাংসদ গৌতম গম্ভীর তো স্বীকার করেই নিলেন, “দিল্লির মানুষকে আমরা বোঝাতে পারিনি”। তবে দলের অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে অন্য সুর।
লোকসভা হোক কিংবা বিধানসভা, এমনকী পুরসভা নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে বিজেপির ভরসা মোদি-শাহ জুটি। সর্বত্রই তাদের নাম জপে কাজ বের করার পরিকল্পনা করেছে বিজেপি নেতৃত্ব। প্রচার করতে ছুটে আসছেন প্রধানমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। অথচ প্রচারে সেভাবে দেখাই মিলছে না রাজ্য নেতৃত্বের। ফলে রাজ্যে কোনও নেতাই তৈরি হচ্ছে না। আবার পুরনো নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ জড়ো হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনে প্রার্থী করার সময় সেসব দিকে কান দিচ্ছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। ফলে সাধারণ মানুষের সমর্থন হারাচ্ছেন তাঁরা।
রাজনৈতিক মহলের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। দিল্লির নির্বাচনের প্রচারেও বারবার পাকিস্তান বিরোধিতা কিংবা ধর্মীয় ভেদাভেদের কথা তুলে এনেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। অথচ স্থানীয় ইস্যু সম্পর্কে একটি শব্দও খোঁজ করছেন না তাঁরা। ফলে স্বভাবতই জাতীয়স্তরের নির্বাচনের বৈতরণী পার করতে পারলেও, বিধানসভায় বারবার ধাক্কা খাচ্ছে গেরুয়া শিবির। সামনেই বিহার-পশ্চিমবঙ্গ-অসমের নির্বাচন। তাই এ রাজ্যগুলি জিততে বিজেপির এখন রাজ্যে নেতা গড়ার দিকে মনোনিবেশ করা উচিৎ বলে দাবি করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।