মাসখানেক আগেই বাংলায় বেজে গিয়েছে পুরভোটের দামামা। ইতিমধ্যেই জোর প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। পুরভোটের কৌশল ঠিক করতে বৈঠকেও বসেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। এবার পূর্ব ঘোষণা মতো রাজ্যের ৯৩টি পুরসভায় ওয়ার্ড সংরক্ষণের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করল কমিশনও। সোমবার প্রকাশিত ওই তালিকায় কলকাতা-সহ সব পুরসভাতেই অনেক হেভিওয়েটের আসন সংরক্ষিত হয়ে গিয়েছে। কোনও আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে, আবার কোনও আসন তফসিলি জাতি বা উপজাতিদের জন্য।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, এভাবে যাঁরা আসন হারালেন, তাঁদের আশেপাশের ওয়ার্ডে পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে কার কার আসন সংরক্ষণের কোপে পড়ল, তা নিয়ে দিনভর রাজ্য রাজনীতি সরগরম থাকে। ১৭ জানুয়ারি ওয়ার্ড সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়। আপত্তি জানানোর শেষ দিন ছিল ৩০ জানুয়ারি। যেসব ক্ষেত্রে আপত্তি উঠেছে, তা নিয়ে শুনানির পর আপত্তির নিষ্পত্তি করে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক এদিন চূড়ান্ত ওয়ার্ড সংরক্ষণ তালিকা প্রকাশ করলেন।
রাজ্য নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য পুর নির্বাচন আইনের নিয়ম অনুযায়ী এবার সেকেন্ড রোস্টার (২-৫-৮) এবং থার্ড রোস্টার (৩-৬-৯) ফর্মুলায় ওয়ার্ড সংরক্ষণ করা হয়। এই ফর্মুলায় যে ওয়ার্ডে তফসিলি জাতি-উপজাতির বাসিন্দার সংখ্যা বেশি, তা তফসিলি জাতি বা উপজাতির জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে। তবে কোনও কোনও ক্ষেত্রে জনসংখ্যার বিচারে এটা করা সঠিক হয়নি বলে অভিযোগ ওঠে। তা নিয়ে জেলাশাসক শুনানি করেন।
তবে অধিকাংশ পুরসভায় খসড়া তালিকায় যা ছিল, চূড়ান্ত তালিকাও তাই-ই রইল। কিন্তু শিলিগুড়ি পুরসভায় খসড়া তালিকায় বড়সড় পরিবর্তন করা হয়। জনসংখ্যার বিচারে খসড়া তালিকায় ভুল ছিল বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়। শুনানির পর চূড়ান্ত তালিকায় তা পরিবর্তন করে দেওয়া হল।
হেভিওয়েটদের মধ্যে সংরক্ষণের কোপে পড়েছেন কাঁথি পুরসভায় তমলুকের সাংসদ তথা কাউন্সিলার দিব্যেন্দু অধিকারী, খড়্গপুর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা নবনির্বাচিত বিধায়ক প্রদীপ সরকার, উত্তরপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান দিলীপ যাদব, বৈদ্যবাটির চেয়ারম্যান অরিন্দম গুঁইন, বাঁকুড়ার বিষ্ণুপর পুরসভার চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন মন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় প্রমুখ।
একইভাবে আসানসোলের মেয়র তথা বিধায়ক জিতেন্দ্র তেওয়ারি ও চেয়ারম্যান অমরনাথ চট্টোপাধ্যায় সংরক্ষণের জন্য নিজেদের ওয়ার্ডে দাঁড়াতে পারবেন না। সংরক্ষণের গেরোয় পড়েছেন বনগাঁ পুরসভার চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান। কোপ পড়েছে বারাসত, নিউ বারাকপুর ও বারাকপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানের আসনেও। কামারহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান গোপাল সাহার ওয়ার্ডটি এবার মহিলার জন্য সংরক্ষিত হয়েছে।
আবার সংরক্ষণের গেরোয় ফেঁসেছেন টিটাগড়ের চেয়ারম্যান প্রশান্ত চৌধুরী, নৈহাটির চেয়ারম্যান অশোক চট্টোপাধ্যায়, গাড়ুলিয়ার চেয়ারম্যান সঞ্জয় সিং, হালিশহরের চেয়ারম্যান অংশুমান রায়, কাঁচরাপাড়ার চেয়ারম্যান সুদামা রায়। ভদ্রেশ্বর ও ডানকুনি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যানরা সংরক্ষণের কোপে পড়েছেন। এখনও বাকি রয়েছে বোলপুর ও সিড়ড়ি পুরসভার ওয়ার্ড সংরক্ষণের তালিকা। ১৭ ফেব্রুয়ারি সিউড়ি পুরসভার সংরক্ষণের তালিকা প্রকাশিত হবে।