প্রথম মোদী সরকারের আমলে বারবারই কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার হয়েছে এ রাজ্য। সেই ধারা বজায় রয়েছে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসেও। আর সদ্য ঘোষিত কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলা সেই ‘ছাগলের তৃতীয় সন্তান’ হয়েই রয়ে গেছে। বলতে গেলে, এবার বাংলার প্রতি বঞ্চনায় নজিরই গড়েছে মোদী সরকার। কারণ কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের বহু রেলপ্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে মাত্র এক হাজার টাকা! শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে, কিন্তু এটাই সত্যি।
গত শনিবার ২০২০-২১ আর্থিক বছরে কেন্দ্রীয় বাজেটে বাংলার বিভিন্ন রেলওয়ে প্রজেক্টের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ এক হাজার টাকার বন্ধনীর মধ্যে রাখা হয়েছে। এ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে রাজ্যের শাসকদল।
তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় গত বৃহস্পতিবার রেল বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় কেন্দ্রের এই আচরণের নিন্দা করে ট্রেজারি বেঞ্চের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা জানেন, বাংলার রেলের বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য কত টাকা বরাদ্দ হয়েছে? এর পরেই তিনি পরনের পাঞ্জাবির দুই পকেট থেকে দুটি ৫০০ টাকার নোট বার করে তুলে ধরে বলেন, এই যে, মাত্র হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে, বুঝলেন?
দীঘা থেকে জলেশ্বর, কালিয়াগঞ্জ থেকে বুনিয়াদপুরের মতো রেলপথ প্রকল্পে সাকুল্যে এক হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। মজার ব্যাপার, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী নিজেকে স্বামী বিবেকানন্দের শিষ্য বলে দাবি করেন, এ বছর বিবেকানন্দের জন্মবার্ষিকীতে বেলুড় মঠে রাতও কাটিয়েছেন। কিন্তু মা সারদার জন্মস্থান জয়রামবাটি থেকে তারকেশ্বর পর্যন্ত রেলপথ সংযোগের প্রকল্পেও বরাদ্দ করা হয়েছে সেই এক হাজার টাকা।
#ekhonkhobor
প্রসঙ্গত, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকাকালীন এই দুই তীর্থক্ষেত্রের মধ্যে রেলপথ সংযোগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। একইভাবে, আরামবাগ থেকে ইরফালা, ইরফালা-ঘাটাল, আরামবাগ- চাঁপাডাঙ্গা, ময়নাপুর-কামারপুকুর ইত্যদি রেলপথ সম্প্রসারণের প্রকল্পেও মাত্র এক হাজার টাকা বরাদ্দ হয়েছে এই বাজেটে। পাশাপাশি, বর্ধমান-কাটোয়া রেলওয়ে লাইনের সংস্কার, আলুয়াবাড়ি রোড-শিলিগুড়ি রেলওয়ে প্রকল্পেও এই একই পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ হয়েছে।
এখানেই শেষ নয়, ভাগিরথী নদীর উপর রেল ব্রিজ তৈরি এবং আজিমগঞ্জ থেকে জিয়াগঞ্জের মধ্যে নতুন রেলপথের যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল সেখানেও বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ সেই এক হাজার টাকাই! এছাড়াও, নিউ আলিপুর থেকে আক্রা এবং বজবজের ডাবল রেলওয়ে ট্র্যাকের জন্য একই টাকা বরাদ্দ হয়েছে কেন্দ্রীয় বাজেটে।
এদিকে কাঁচরাপাড়া কোচ ফ্যাক্টরির জন্য মাত্র এক লক্ষ টাকা এবং কাঁচরাপাড়া রেলওয়ে ওয়ার্কশপের জন্য পাঁচ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, রেলমন্ত্রী থাকাকালীন মমতা বাংলার যে রেলপথ সংস্কার ও সংযোগের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, তা নিয়ে আসলে এগোতেই চায় না মোদী সরকার। তাই নামমাত্র অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। তৃণমূলের নেতা-মন্ত্রীরা একে বিজেপি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বলে বর্ণনা করেছেন।