কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাদের কাছে বেশ কিছু দিন ধরেই খবরটা আসছিল। এক মহিলা নিজেকে শীর্ষ গোয়েন্দাকর্তা পরিচয় দিয়ে বিভিন্ন লোকজনকে চাকরি দেওয়া থেকে শুরু করে নানা রকমের কাজ পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। শুধু তাই নয়, অনেককে তিনি ধমকেছেন-চমকেছেন, এমন অভিযোগও পান গোয়েন্দারা। এর মধ্যেই সত্যব্রত বসু রায় নামে বছর তেইশের এক যুবক অভিযোগ করেন, ওই মহিলা তাঁকে সরকারি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নিয়েছেন। বাঁশদ্রোণীর বাসিন্দা ওই যুবকের চাকরিও হয়নি, উল্টে টাকা ফেরত চাইলে মহিলা তাঁকে হুমকি দিয়েছেন।
এলাকায় তাঁর দাপটে রীতিমতো অস্থির থাকত লোকজন। নীলবাতিওয়ালা গাড়ি। সব সময়ের গাড়িচালক। গাড়িতে লাল রঙের বোর্ড— তাতে লেখা, ‘ভারত সরকার, ইনটেলিজেন্স ব্যুরো’। এলাকার সবাই তাঁকে চিনতেন বদমেজাজি শীর্ষ পুলিশকর্তা হিসাবে। কিন্তু শেষে জানা গেল, পুলিশকর্তা তো দূরঅস্ত্, আসলে তিনি বড় মাপের জালিয়াত!
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই মহিলার নাম অচিরা যাদব। আদতে তিনি অসমের তিনসুকিয়ার বাসিন্দা। বছর সাতচল্লিশের ওই মহিলার স্বামী মহাবীরপ্রসাদ যাদব ছিলেন কেন্দ্রীয় শুল্ক দফতর-এর পদস্থ কর্তা। ২০১৭ সালে তিনি মারা যান। জেরায় অচিরা দাবি করেছেন, তাঁর বাবা সুবোধচন্দ্র চৌধুরী ছিলেন অরুণাচল প্রদেশের প্রাক্তন বনকর্তা। স্নাতক পর্যায় পর্যন্ত তাঁর পড়াশোনা তিনসুকিয়াতে। স্নাতোকত্তর পর্যায়ের লেখাপড়া গুয়াহাটিতে। ‘গ্লোবাল টেররিজম’ বা বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাস নিয়ে তিনি গবেষণাও করেন। তাঁর দাবি, তিনি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি-ও করেছেন।
কলকাতা পুলিশের এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘আমরা মহিলার দাবি খতিয়ে দেখছি। তবে, তাঁর স্বামী শুল্ক দফতরে কাজ করতেন।” সেই সূত্রেই তাঁর কলকাতা বন্দর এবং শহরের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত বেশ কিছু আমলার সঙ্গে আলাপ-পরিচয় ছিল বলে জানা গিয়েছে। সেই পরিচয় কাজে লাগিয়েই তিনি নিজেকে ‘ইনটেলিজেন্স ব্যুরো’র আইজি পদমর্যাদার আধিকারিক বলে পরিচয় দিতেন। তাঁর কাছ থেকে একটি ভুয়ো পরিচয়পত্রও পেয়েছে পুলিশ।