সিএএ-এনআরসি বিরোধী আন্দোলনে প্রথম থেকেই উত্তাল উত্তরপ্রদেশ। রাজ্যে বিক্ষোভকারীদের রুখতে যে পদক্ষেপ করেছে প্রশাসন, তা নিয়ে বারনারই বিতর্কের শিরোনামে উঠে আসছে মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের নাম। এবার ফের মুখ পুড়ল যোগী সরকারের।
কোনও প্রমাণ নেই পুলিশের কাছে। না আছে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার প্রমাণ। না আছে পুলিশের ওপর গুলি চালানোর প্রমাণ। অথচ সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় গত মাসে ৮৩ জনকে গ্রেফতার করেছিল যোগীর পুলিশ। এবার তাঁদের মধ্যে ৪৮ জনকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হল। যথাযথ প্রমাণের অভাবেই এবার তাঁদের জামিন দিল পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বিজনৌরের একটি আদালত।
জামিনের আদেশে বিচারক বলেন, ‘পুলিশি এফআইআরে দাবি করা হয়েছে, উত্তেজিত জনতা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল, কিন্তু তার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ কোনও অস্ত্র বাজেয়াপ্ত করার প্রমাণ আদালতে দেখাতে পারেনি। পাশাপাশি সরকারি আইনজীবীরাও আদালতে কোনও প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হয়েছেন। জনতার একটি অংশ যে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছিল তার কোনও যথাযথ প্রমাণ মেলেনি।’
পুলিশের দাবি ছিল, সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুর করে উত্তেজিত জনতা এবং দোকানগুলিতে আগুন ধরিয়ে দেয়। তবে প্রাইভেট গাড়ি বা দোকান ভাঙচুর করার অভিযোগের পক্ষে কোনও প্রমাণ আদালতে পেশ করা হয়নি। যদিও একটি সরকারি গাড়ির ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে পুলিশি রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা প্রায় ২০ দিন পরে তৈরি করা হয়েছিল। সরকারি আইনজীবীরা বলছেন, এই ঘটনায় ১৩ জন পুলিশ কর্মী আহত হয়েছেন। তবে তাঁদের মেডিকেল রিপোর্টে দেখা গেছে, আঘাত খুবই অল্প।
উল্লেখ্য, দিল্লী থেকে ১৬১ কিলোমিটার দূরে বিজনৌরে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে ব্যাপক হানাহানির ঘটনা ঘটে। ২০ ডিসেম্বর ওই বিক্ষোভ চলাকালীন মারা যান দু’জন। সেই সময় উত্তরপ্রদেশ পুলিশের তরফে স্বীকার করা হয়, দুই ব্যক্তির মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছিল পুলিশের গুলিতে। উত্তরপ্রদেশে পুলিশের গুলিতে মৃত্যুর ঘটনার সেটাই ছিল একমাত্র স্বীকারোক্তি।
বিজনৌরের মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনাটি ঘটে নাগিনা নামের একটি শহরে। অভিযোগ ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার নমাজ পাঠের পর সংঘর্ষ হয় সেখানে। ওই ঘটনায় সেই সময় পুলিশ মোট ৮৩ জনকে গ্রেফতার করে। স্থানীয় পুলিশ জানায়, নমাজের পরে হাজার হাজার জনতা বিনা প্ররোচনায় বহু যানবাহন ও দোকানে ভাঙচুর চালায়। নষ্ট করে সরকারি সম্পত্তিও। সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গেলে তাঁদের লক্ষ্য করে পাথর ও গুলি ছোঁড়ে বিক্ষোভকারীরা। এবার প্রমাণিত হল, সব অভিযোগই মিথ্যে। এ নিয়ে যে নতুন করে অস্বস্তি বাড়ল যোগী সরকারের, তা বলাই বাহুল্য।