মোদী সরকারের কর্মকান্ড দেখে যখন এক এক করে মুখ খুলছে মার্কিন কংগ্রেস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যরা, তখন ভুটানেও এড়িয়ে যেতে চাইছে মোদীর ভারতকে। ভারতীয় পর্যটকদের ব্রাত্য করতে এবার তাঁদের ভুটান সফরে লাগাম আনতে চাইছে প্রতিবেশী দেশটি। ভুটানের নয়া পর্যটন নীতিতে ভারতীয় পর্যটকদের জন্যও বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে পাসপোর্ট। ভারতকে বন্ধু বললেও ভুটান সরকারের সাফকথা, সংখ্যা নয়, গুণগত মানকেই তাঁরা পর্যটন বিকাশে গুরুত্ব দিতে চান। আর সেটা চান দীর্ঘস্থায়ী পর্যটন উন্নয়নের স্বার্থেই।
ছোট্ট ছবির মতো সুন্দর ভুটান জিডিপি (জাতীয় উৎপাদন উন্নয়ন হার)–র বদলে জিএনপি (জাতীয় সুখ–এর হার) নিয়ে বেশি চিন্তিত। দেশের মানুষের সুখই তাদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু সেই সুখ সাময়িক হলে চলবে না, চাই স্থায়িত্ব। এমনটাই চাইছেন ভুটানের রাজা জে কে এম ওয়াংচুক। সেন্টার ফর ভুটানিজ স্টাডিজ হাতে নিয়েছে নয়া প্রকল্প জিএনপি। গোটা দেশজুড়ে চলছে স্থায়ী সুখের সন্ধানে বিশেষ কর্মসূচী।
বর্তমানে ভুটানের মূল আয় হচ্ছে জলবিদ্যুৎ থেকে। পর্যটনের স্থান দু’নম্বরে। কিন্তু ভুটানের পর্যটন পর্ষদের মহা নির্দেশক দোর্জদি ধ্রাধুলের মতে, পর্যটনকে ঠিকমতো কাজে লাগালে সেটা উঠে আসবে প্রথম স্থানে। এক্ষেত্রে তিনি স্থায়ী পর্যটন বিকাশের কথা বলে শুনিয়েছেন ভুটান সরকারের নয়া স্লোগান, ‘হাই ভ্যালু, লো ভলিউম’! ভুটানকে তাঁরা বলছেন, ‘সার্বিক জাতীয় সুখের জন্মস্থান’। একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দিতে চাইছেন দুনিয়ার একমাত্র কার্বন নেগেটিভ অর্থনীতির কথাও। আর এই খেতাব ধরে রাখতেই তাঁরা চাইছেন পর্যটকদের ওপর নিয়ন্ত্রণ চাপাতে।
ভুটানে এখনও ভারত, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের নাগরিকদের পাসপোর্ট বা ভিসা লাগে না। দুনিয়ার বাকি দেশগুলির নাগরিকদের ৪০ মার্কিন ডলার ভিসা ফি–র পাশাপাশি প্রতিদিন দিতে হয় ৬৫ ডলার স্থায়ী উন্নয়ন দক্ষিণা (এসডিএফ)–ও। এগুলি থেকে ভারত, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের নাগরিকদের এতদিন ছাড় দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ভুটান সরকার তাঁদের পর্যটন নীতি বদলাচ্ছে। সংসদে আলোচনা চলছে, ভারত, বাংলাদেশ ও মালদ্বীপের ওপর কিছুটা হলেও চাপানো হচ্ছে দৈনিক এসডিএফ।
পর্যটন সূত্রে খবর, দিনে ১২০০ টাকা করে এসডিএফ লাগতে পারে। এছাড়াও লাগবে ভুটান সফরের আগাম অনুমতি। ১৬ জানুয়ারি সংসদে পেশ করা নতুন বিলে পর্যটকদের খরচের ন্যূনতম বিষয়টিও নিশ্চিত হতে চাইছে ভুটান সরকার।
ভুটান ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সোনম দোর্জির মতে, দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়ন আর পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের স্বার্থেই এটা জরুরি। সেইসঙ্গে তাঁরা পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টিও নিশ্চিত করতে চান। সেইসঙ্গে তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, ভারতের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ভুটানিজদের থেকেও বাড়তি পয়সা আদায় বা টোলট্যাক্সের বিষয়টিও। ভুটানের তরফে ভারতীয় পর্যটকদের ওপর লাগাম টানাকে মোদী জমানার পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।